ঢাকা ওয়াসার নতুন এমডি নিয়োগেও জালিয়াতি

0
137

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানটির বিতর্কিত সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের সময় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকসিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয়।

এদিকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নতুন এমডি হিসেবে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়ায় কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তুোষ।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৫ আগস্ট ওয়াসার এমডি তাকসিম খানের নতুন চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকসিম খানের নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠতম ডিএমডিকে এমডির দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এ কে এম সহিদ উদ্দিন নিজেই পদটি বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, এ কে এম সহিদ উদ্দিন ২০১৬ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যায়। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাকে দুই বছরের চুক্তিতে পরিচালক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন এমডি তাকসিম এ খান। অথচ ঢাকা ওয়াসার জনবলকাঠামোয় এমন কোনো পদ নেই। তাকসিম খান নিজ ক্ষমতাবলে এ পদ সৃষ্টি করে সহিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়।

সহিদ উদ্দিনকে এভাবে পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাকসিম এ খানসহ ঢাকা ওয়াসার নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে নিয়োগ দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার তিন কর্মকর্তা বলেন, কোনো ধরনের বোর্ড সভা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান সুজিত কান্তি বালা এমডি পদে সহিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দিয়ে গেছে। বোর্ড সভা ছাড়া এভাবে নিয়োগ বৈধ নয়। আবার এ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য জ্যেষ্ঠতার যে তালিকা তৈরি করা হয়, সেটিও করেছে সহিদ উদ্দিন নিজেই। সেখানে সে নিজের নাম এক নম্বরে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার নির্দেশনা মানা হয়নি।

ঢাকা ওয়াসা সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ডিএমডি পদে কর্মরত ছিলেন চারজন। সহিদ উদ্দিন ছাড়া অপর তিনজন হলেন সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদ ইয়াজদানি, মো. আক্তারুজ্জামান ও মিজানুর রহমান। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ডিএমডি মোহাম্মদ ইয়াজদানি। তাকসিম খানের রোষানলে পড়ে বরখাস্ত হলে উচ্চ আদালতে যান তিনি। ১০ জুন বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এরপর আদালতের রায় নিয়ে ঘুরলেও তিনি কাজে যোগদান করতে পারেননি। এদিকে আক্তারুজ্জামানকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১০ মে। চার মাস পর একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান বাকি দুই ডিএমডি সহিদ উদ্দিন ও মিজানুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কোনো বোর্ড না থাকায় মোহাম্মদ ইয়াজদানি কাজে যোগ দিতে পারছেন না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ ডিএমডি হিসেবে এমডি পদে চলতি দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল মো. আক্তারুজ্জামানের। কিন্তু জালিয়াতি করে পদ ভাগিয়ে নেয় সহিদ উদ্দিন।


তথ্যসূত্র:
১.  তাকসিম খানের অবৈধ নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিই ঢাকা ওয়াসার এমডি, নতুন নিয়োগেও ‘জালিয়াতি’- https://tinyurl.com/37h73686

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে টিফিনে বিরিয়ানি আনায় মুসলিম শিশুছাত্রকে স্কুল থেকে বহিষ্কার!
পরবর্তী নিবন্ধসোমালিয়ায় মার্কিন বিমানঘাঁটিতে মুজাহিদিনদের হামলায় অন্তত ১৬ সেনা হতাহত