আজ থেকে ৩০ বছর আগে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল দেশটির উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। ধর্মীয় স্থাপনায় ওই হামলা সূচনা করেছিল একটি ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার। ওই দাঙ্গায় দেশটির হাজার হাজার মানুষ নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তিন দশক পরও ভারতীয় মৌলবাদী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে আগের চেয়ে তারা আরও সাহসী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে, ভারতের ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনাগুলোর সবগুলোতেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের চোখ পড়েছে।
এরই জের ধরে এবার মসজিদ ভাঙার দাবিতে আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারতের হিমাচল প্রদেশের শিমলা। সেখানকার ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, কংগ্রেস সরকারের মদতে রাজ্যের নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে মসজিদ। সেগুলো ভাঙার দাবিতে হিন্দুত্ববাদীদের মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। পালটা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে আন্দোলনকারীরা। সব মিলিয়ে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
জানা গিয়েছে, মসজিদ ভাঙার দাবি তুলে ১১ সেপ্টেম্বর, বুধবার দুপুরে শিমলার ধাল্লি সবজি মান্ডির এলাকায় জমায়েত করে শতাধিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনতা। ভিড় সাঞ্ঝৌলির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। এর পরই উত্তপ্ত হয়ে পরিস্থিতি। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে উত্তেজিত জনতা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হিন্দু একতা জিন্দাবাদ’। ধাল্লি টানেলের কাছে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভিড় মসজিদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। আটক করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সভাপতি কমল গৌতমকে।
পুলিশের দাবি, সহিংসতা ছড়াতে পরিকল্পিতভাবে জমায়েত করেছিল বেশকিছু হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। স্বশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেই জড়ো হয়েছিল আন্দোলনকারীরা। অশান্তি আটকাতে সাঞ্ঝৌলির দিকে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর মিডিয়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইছে। যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে তাদের ২০-২৫ জনকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি চিনি। বিভিন্ন স্তরের ভোটে তারা বিজেপির টিকিটে লড়েওছে।’
হিন্দুত্ববাদীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোকে বিতর্কিত করতে হিন্দুত্ববাদী আদালতে একের পর এক মামলা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মসজিদের স্থানগুলোকে প্রথমে বিতর্কিত করা, যেন পরে হিন্দুত্ববাদী আইন আদালতের মাধ্যমে সে জায়গাগুলো দখল নিতে পারে। আর ঘটছেও এমনটাই। তারা জানে, আজ না হোক কাল হিন্দুত্ববাদী আদালত তাদের দাবির পক্ষেই রায় দিবে; যেমনটা হয়েছে বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
তথ্যসূত্র:
1.Shimla mosque row: Protestors break barricades, clash with police
– https://tinyurl.com/vkvc45ky
2.Shimla mosque row: Protesters clash with police at Dhali tunnel; water cannon used to disperse crowd
– https://tinyurl.com/4czwu242