আল-কায়েদা পশ্চিম আফ্রিকান শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম), মালির রাজধানী বামাকোতে অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন এক সফল অভিযান পরিচালনা করছেন। রাজধানীর বুকে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানে মুজাহিদদের অতর্কিত এই অভিযানে শত শত সৈন্য নিহত হয়েছে, ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০টি যুদ্ধবিমান এবং কয়েক ডজন সাঁজোয়া যান।
সূত্রমতে, জেএনআইএম মুজাহিদগণ তাদের অভূতপূর্ব এই অপারেশনটি শুরু করেছিলেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৫:৩০ মিনিটের সময়। অভিযানে অংশ নেন জেএনআইএম-এর ২ জন ইস্তেশহাদী মুজাহিদ ও এক ডজনেরও বেশি ইনগিমাসী যোদ্ধা।
অভিযানের শুরুতে একজন ইস্তেশহাদী মুজাহিদ বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে রাজধানীর সবচাইতে সুরক্ষিত জেন্ডারমেরি মিলিটারি একাডেমি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় একাডেমি ভবনে অবস্থান নেওয়া শত শত ওয়াগনার ও জান্তার নতুন প্রশিক্ষিত সৈন্যরা কিছু বুঝে উঠার আগেই নিহত হয়, অন্যরা পালানোর চেষ্টা করলে জেএনআইএম-এর ইনগিমাসী যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয়।
মিলিটারি একাডেমিতে বিস্ফোরণের পরপরই দ্বিতীয় ইস্তেশহাদী মুজাহিদ দেশটির সামরিক “এয়ার বেস ১০১” এ বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন এবং সফলভাবে দ্বিতীয় ইস্তেশহাদী হামলা চালান। বিস্ফোরণের সাথে সাথে অন্যান্য ইনগিমাসী মুজাহিদগণ সামরিক এয়ার বেস ১০১ ও এর সংলগ্ন সেনৌ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন।
এরপর শুরু হয় মালির রাজধানী বামাকোর হৃদয়ে জান্তার শক্তি ও গর্বের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানে মুজাহিদদের তীব্র আক্রমণ। আর এই আক্রমণ চলতে থাকে বিকাল পর্যন্ত টানা ৯ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। এসময়টাতে মুজাহিদগণ যতক্ষণ চেয়েছিলেন ততক্ষণ বিমানবন্দরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছিলেন, অবাধে বিচরণ করেছেন টারমাকে। আর খুঁজে খুঁজে শেষ করছিলেন শত্রু সৈন্যদের।
আয-যাল্লাকার তথ্য অনুযায়ী, অভিযানের সময় ইনগিমাসী মুজাহিদগণ সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও অবস্থানগুলিতে বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। ফলে ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় জান্তার গর্বের স্থানগুলো। আর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয় জান্তা ও ওয়াগনার বাহিনীর ৬টি যুদ্ধবিমান এবং ১টি তুর্কি বায়রাক্টার TB2 ড্রোন। আর অন্যান্য আরও ৪টি বিমান মুজাহিদগণ চলাচলের জন্য নিষ্ক্রিয় করেন, যা শীঘ্রই আকাশে উড়াল দিতে পারবে না। এই বিমানগুলির মাঝে দেশটির সরকারকে বহনকারী বিমানটিও রয়েছে। এই অভিযানে মুজাহিদগণ প্রায় এক ডজন যুদ্ধবিমান ধ্বংস ছাড়াও কয়েক ডজন সামরিক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছেন, এসময় সাইটে থাকা সমস্ত সামরিক সরঞ্জাম হয় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুজাহিদদের এই নজিরবিহীন অপারেশনে শত্রুর বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও শত শত সেনা নিহত এবং আরও শতাধিক সৈন্য আহত হয়েছে। বাকিরা দেয়াল টপকিয়ে বা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, এই অভিযানে অন্তত ১৬৭ সেনা নিহত এবং ৩০০ এরও বেশি সেনা আহত হয়েছে। আর দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিহত সেনা সংখ্যা ১০০ বলে উল্লেখ করেছে, যাদের মধ্যে ৮১ জনের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৫০ জনের শেষকৃত্য এক সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে আয-যাল্লাকা মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জেএনআইএম উল্লেখ করেছে যে, মুজাহিদগণ বীরত্বপূর্ণ এই অভিযানে শাহাদাত বরণের আগ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে শত্রু বাহিনীকে পরাভূত করেছেন। মুজাহিদগণ এই অভিযানের মাধ্যমে জান্তা ও তাদের রাশিয়ান মিত্র ওয়াগনার দ্বারা এই অঞ্চলের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘটিত শত শত জুলুম ও গণহত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন। এই মুজাহিদগণ তাদের খাঁটি রক্ত দিয়ে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে, রাজধানীর সুরক্ষিত এলাকা এবং মজবুত দুর্গগুলো শত্রু বাহিনীকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আর মুজাহিদদের অভিযানগুলো অন্যায়কারীদের জানিয়ে দিবে তাদের সর্বশেষ গন্তব্য কোন পথে।
উল্লেখ্য যে, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে মুজাহিদদের এতো বড় আকারের সামরিক অপারেশন দেখেনি মালির জান্তা ও সরকারগুলো। রাজধানীতে এর আগে মুজাহিদদের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য আক্রমণটি চালানো হয়েছিল ২০১৫ সালের নভেম্বরে। আক্রমণটি রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে সামরিক বাহিনীর একটি মিটিংয়ে চালানো হয়েছিল।