ভারতে ভেঙে দেয়া হচ্ছে মুসলমানদের বাড়ি-ঘর

0
126

নগর উন্নয়নের কথা বলে নোটিশ ছাড়াই শত শত ভারতীয় মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে দলটির সমালোচকদের শাস্তি দিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

১৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছের বাসিন্দা ও হিসাবরক্ষক শহীদ মালিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে তার একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। দুই বছর ধরে তার বাড়িসহ আরও দুই ডজন বাড়ি ভাঙার বিচারের জন্য স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভারতের রাজধানীতে নগর পরিকল্পনা, আবাসন ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নির্মাণ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি সংস্থা কোনো জরিপ বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ওই বাড়িগুলো ভেঙে ফেলে।

শহীদ মালিক জনান, তার একটি রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে এবং অন্যটি তার নিজের বাড়ির জন্য। মামলাগুলো এখনও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷ শুনানির দিন ক্রমাগত পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার অভিযোগ উপস্থাপন করার সুযোগও পাননি।

চলতি বছরের জুনে উত্তর প্রদেশের আকবর নগরে গুঁড়িয়ে দেওয়া এক হাজার ৬০০ বাড়ির মধ্যে সালমা বানোর বাড়িও ছিল। ওই সময় লক্ষ্মৌতে কুকরাইল রিভারফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের জন্য এক হাজারেরও বেশি মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। বন তৈরির জন্য তাদের ধ্বংস করে দেওয়া বাড়ির জমিতে রোপণ করা হয় গাছে চারা।

সালমা বলেন, ‘আমাদের পুরো পাড়া বুলডোজার দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবকিছু ধুলোয় পরিণত হয়ে গেল। পরের দুই-তিনদিন আমরা কিছুই খেতে পাইনি। এখন এই নতুন বাড়িতে আসার পরও প্রতিদিন চিন্তা হয় কতটা খাবো। কারণ, আমাদের আয় যথেষ্ট নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার পাঁচটা সন্তান। আমি তাদের কীভাবে খাওয়াবো যখন আমার বাড়ি আর আমার পুরো পৃথিবী ভেঙে গেছে?’

পরে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে তাদের এলাকা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বসন্ত কুঞ্জতে স্থানান্তর করা হয়।

ঘরবাড়ি ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জানতে আলজাজিরার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও লাক্ষ্মৌ নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দেয়নি।

সালমা বলেন, ‘আমি সবসময় চিন্তিত থাকি। আমার সন্তানরা সঠিক শিক্ষা পাবে না। তাদের স্কুল আমাদের পুরনো বাড়ির কাছে ছিল। এখন আমরা তাদের স্কুলের ফি বা স্কুলবাসের খরচও দিতে পারি না।’

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে নতুন যে জায়গায় বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য সরকারকে তাদের কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

সালমা বলেন, ‘আকবর নগরের তুলনায় এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অনেক বেশি। মুদ্রাস্ফীতি আমাদের জীবন্ত খেয়ে ফেলছে। আমি অনুভব করি যে আমাদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

সালমার স্বামী মোহাম্মাদ ইসহাক জানান, বাড়ি ধ্বংসের কারণে তার পরিবারটিই ভেঙে গেছে। আগে বাবা-মা ও ভাই তার সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু নতুন এই ছোট্ট ফ্ল্যাটে তাদের জন্য জায়গা নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার চাকরিও হারিয়েছি। জীবিকা নির্বাহের জন্য ইসহাক ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনি। আমি জানি না কতদিন এভাবে চালিয়ে যেতে পারব। আমরা কি আমাদের পুরনো জীবন ফিরে পাব?’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালিকের মতো শত শত ভারতীয় মুসলমানদের কোনো নোটিশ ছাড়াই, অনেক ক্ষেত্রে আইনি নথি ছাড়া ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায়ই নগর কর্তৃপক্ষ নগর উন্নয়ন, সৌন্দর্যায়ন বা ‘অবৈধ দখল’ সাফ করার কথা বলে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে দলটির সমালোচকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার প্রকাশ্যেই এমন ধ্বংসের কথা বলেছেন নেতারা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে বুলডোজার বাবা (ড্যাডি বুলডোজার) উপাধি অর্জন করেছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বুলডোজার মামা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।


তথ্যসূত্র:
1. After the bulldozer: Indian Muslims grapple with loss amid demolished homes
– https://tinyurl.com/ymetepkn

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিডিও || এবার পণ্যবাহী ট্রাক তৈরি করল ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান
পরবর্তী নিবন্ধগুম-খুনের জন্য ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার র‍্যাবের