পাশদান বাঁধ প্রকল্প: হেরাত প্রদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি

0
41

পাশদান বাঁধ নির্মাণ আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। অঞ্চলটির অর্থনীতি, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে এই প্রকল্প উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি করবে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তালেবান সরকার পুনর্গঠনের পর দেশের অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। পাশদান বাঁধের নির্মাণ কাজ ২০১১ সালে আরম্ভ হয়েছিল। কিন্ত বিগত প্রশাসনের আমলে তা পুরোপুরি সমাপ্ত হয় নি। তাই উক্ত বাঁধের নির্মাণ সম্পন্ন করা ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারপূর্ণ প্রকল্প। বর্তমানে এটির ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি হিজরি সৌরসালের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ১১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে হেরাতবাসীকে প্রায়ই নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হল পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো লাঘব করা।

কৌশলগত কারণে বাঁধটি হরি নদীর উপর অবস্থিত। নদীটিতে স্বাভাবিক প্রবাহ অনুযায়ী পানির সহজলভ্যতা রয়েছে। এই নদী আফগানিস্তানের পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি হয়ে ইরানের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। পাশদান বাঁধ নির্মাণের উপকারী কয়েকটি দিক নিম্নরূপ:

১) সেচ: সংশ্লিষ্ট বাঁধের প্রাথমিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে কৃষি উৎপাদনের জন্য সেচের পানি সরবরাহ করা। হেরাত আফগানিস্তানের অন্যতম কৃষিসমৃদ্ধ প্রদেশ। এতে গম, বার্লি, নানা প্রকার ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁধটির আওতায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। এতে প্রদেশটির কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।

২) পানি ব্যবস্থাপনা: বাঁধটি হরি নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। ফলে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর দ্বারা খরা ও বন্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। বর্ষাকালে এটি অতিরিক্ত পানি সঞ্চয় করে রাখবে, যা শুষ্ক মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ফলে সারাবছরই কৃষিজ ও গার্হস্থ্য প্রয়োজনে পানি সহজলভ্য হবে। উল্লেখ্য যে, বাঁধটির পানি ধারণ সক্ষমতা ৪৫ মিলিয়ন ঘনমিটার।

৩) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: হেরাত প্রদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল কৃষি। সেচ ব্যবস্থায় উন্নতি হলে প্রদেশটিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাব, ফসল চাষাবাদে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হবে। কৃষক পরিবারের আয় বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি খাদ্যে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকল্পটি স্থানীয় অর্থনীতিকে বেগবান করছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী প্রধানের মতে, উক্ত প্রকল্পে বর্তমানে ৪০০ জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন পড়বে।

কাজেই প্রকল্পটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দারিদ্র্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখবে।

৪) জলবিদ্যুৎ: পাশদান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সাথে ২ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি হেরাত প্রদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির (যেমন কয়লা) মত এতে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা নেই।

৫) পরিবেশগত প্রভাব: হেরাত অঞ্চলের প্রধান দুটি সমস্যা হল খরা প্রবণতা ও ভূমিক্ষয়। বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভূমির ক্ষয়রোধ সম্ভব হবে। এছাড়া পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খরার প্রাদুর্ভাব দূর হবে। পাশাপাশি এটি জলাভূমি ও প্রাকৃতিক আবাসগুলোতে পানির সুষম সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ফলে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র আরও সুসংহত হয়ে উঠবে।

৬) বিনোদন কেন্দ্র:প্রকল্প বাঁধ সংশ্লিষ্ট স্থানটি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট ক্রমেই একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। প্রকল্পের স্থাপনা এবং আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকগণ আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাই বাঁধ অবকাঠামোর পাশাপাশি পর্যটন সুবিধাদি গড়ে তুলতে সরকারের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন ভ্রমণকারীগণ।

হেরাত প্রদেশের সুদূরপ্রসারী ও টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পাশদান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এটি একদিকে দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রমাণ দিচ্ছে, পাশাপাশি পানির অভাব, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ঘাটতি ও পরিবেশ অবক্ষয়ের মত বড় বড় সমস্যা সমাধানে আশার আলো দেখাচ্ছে পাশদান বাঁধ প্রকল্প।


তথ্যসূত্র:
1. Pashdan Dam: Empowering Herat’s Future through Water, Energy, and Growth
– https://tinyurl.com/4s733bjx
2. Construction of Pashdan Dam in Herat Reaches 90%; Becomes Recreational Hub
– https://tinyurl.com/2r64nre3

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে মসজিদে আযান দেওয়ার সময় উগ্রবাদী হিন্দুদের বাঁধা
পরবর্তী নিবন্ধবিজয় র‌্যালিতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪