একদিনে ৬৮ হত্যায় কেঁদেছিল সাভার-আশুলিয়াবাসী

0
75

চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত দিন ৫ আগস্ট ছিল সাভার-আশুলিয়াবাসীর জন্য এক বিভীষিকাময় দিন। এদিন সাভার ও আশুলিয়ার ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ এবং দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলিতে ৬৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি। আর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এ এলাকার রাজপথ ও অলিগলি।

সাভারে নিহতদের মধ্যে মিরপুর এমআইএসটির ছাত্র আসহাবুল ইয়ামিন, টঙ্গির সাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী নাফিসা হোসেন মারুয়া এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাইয়ুমের হত্যাকাণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আশুলিয়ায় পুলিশ মৃতদেহ ভ্যান গাড়িতে তুলে তা আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করার মতো নৃশংসতা দেখিয়েছে।

ফ্যাসিস্ট সরকার জুলাই-আগস্টে সাভার-আশুলিয়ার ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে যে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন চালিয়েছে তা তখনকার মিডিয়ায় সার্বিকভাবে প্রকাশিত হয়নি। সে সময়ে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্ক এখনও মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

সরেজমিনে স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বরাবরই উত্তাল ছিল রাজধানীর উত্তর-পশ্চিম প্রবেশদ্বার সাভার ও আশুলিয়া। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় শুরুতেই রক্তাক্ত হয় এ এলাকার জনপদ। সাভার থানার অসি শাহ জামান ও আশুলিয়া থানার অসি এএফএম সায়েদ স্থানীয় জনতার কাছে জমদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়।

জুলাই আন্দোলনে নিহতের ঘটনা বিবেচনায় সারা দেশে এলাকা হিসেবে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে সাভারে। এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ আগস্ট অন্তত ৩১ জনের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরবর্তী সময়ে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়।

তাদের মধ্যে ছাত্র, শারীরিক প্রতিবন্ধী, শিশু, দিনমজুর, পোশাককর্মী, দোকানকর্মী রয়েছে। এ ঘটনাগুলোয় জুলাই আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম বিপর্যয়ের চিত্র ফুটে ওঠে। এদিন আহত হন সহস্রাধিক। তাদের মধ্যে অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ৫ আগস্ট লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আশুলিয়া থানার সামনে ৬ জনের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

গুলি করে মোট হত্যা করেছে ২২ জন। যা ছিল সব পৈচাশিক ঘটনার অন্যতম। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র নেট দুনিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়। ধিক্কার জানায় বিশ্ব বিবেক। আশুলিয়া থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী এ আন্দোলনে ৪৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির দুই সদস্য রয়েছে। তাদেরকে বাইপাইল মোড়ে উড়াল সেতুর উপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিল।

জানা যায়, ১৪ জুলাই থেকে এই এলাকায় আন্দোলন বেশ গতি পায়। বৈষম্যবিরোধী দাবির পক্ষে ১৫ জুলাই প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দীর্ঘ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। এদিন তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাভারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

সাভার বাসস্ট্যান্ড, আশুলিয়ায় বাইপাইল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে সড়কে অবস্থান নেয়। ১৮ জুলাই সাভার বাসস্ট্যান্ডে রাজধানীর মিরপুর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) মেধাবী শিক্ষার্থী শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনকে উপর্যুপরি গুলি করে মুমূর্ষু অবস্থায় সাঁজোয়া যানে ঘুরিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। রাজপথে পড়ে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনাটি দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ও ব্যাপক আলোচিত হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরুতেই পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ছাত্র-জনতাকে দমন করতে অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাভারের রাজপথে অবস্থান নেয়।

১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা সাভার, আশুলিয়া ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে অন্তত ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এ দিন প্রায় শতাধিক বিএনপি ও জামায়াত নেতার বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে পুলিশ। স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা অফিসেও হামলা করে ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়।

১ আগস্ট থেকে সাভার উপজেলার প্রতিটি অলিগলিতে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে হাজার হাজার গুলি ছুড়ে জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়াতে থাকে। ৩ আগস্ট সাভারের সিআরপি সড়ক এবং দেওগা গলিতে দুজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। দেওগা সড়কে মুরগির দোকানি কোরবান আলী ও কর্মচারী ফারুককে দোকান খোলা রাখায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা সাভারে ব্যাপক চাঞ্চলের জন্ম দেয়।


তথ্যসূত্র:
১. একদিনে ৬৮ হত্যায় কেঁদেছিল সাভার-আশুলিয়াবাসী
– https://tinyurl.com/y36r3aek

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার
পরবর্তী নিবন্ধমুহুরী নদীতে সেচ পাম্প বসাতে বিএসএফের বাধা