গত ১৯ জানুয়ারি, রবিবার অবরুদ্ধ গাজায় কার্যকর হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে বন্দি থাকা ৯০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় রাত ১টায় রেড ক্রসের বাসে করে তাদের কারাগার থেকে রামাল্লায় নিয়ে আসা হয়। সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যাপন নিষিদ্ধ করার সতর্কতা সত্ত্বেও এ সময় হাজারো মানুষ তাদের উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ জন কিশোর ছিল, যাদের কারও কারও বয়স মাত্র ১২ বছর। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের বাসিন্দা।
তাদের মধ্যে একজন ৬২ বছর বয়সী খালিদা জাররার। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের একজন শীর্ষ নেতা তিনি। তাকে ছয় মাস ধরে দখলদার ইসরায়েলি প্রশাসন বিনা বিচারে নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে বন্দিরা পৌঁছানোর পর, তাদের অনেককেই কাঁধে তুলে নেন উল্লসিত জনতা। উল্লাসে চিৎকার ও শিঙা বাজান অন্যরা। সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই ফাতাহ, হামাস, প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পতাকা বহন করছিল।
এর সাত ঘণ্টা আগে, গাজা থেকে তিনজন ইসরায়েলি নারী বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়, যাদের বয়স ২০ ও ৩০ এর মাঝামাঝি।
ফিল্লিস্তিনি সাংবাদিক বুশরা আল-তাওয়িলকে ২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েলি বাহিনী বন্দি করে। তাওয়িল জানান, রবিবার ভোর ৩টায় তার মুক্তির যাত্রা শুরু হয়। তাকে প্রথমে অন্য আরেকটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আরও কিছু বন্দি ফিলিস্তিনিদের সাথে মিলিত হন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অপেক্ষাটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমরা জানতাম যে, যেকোন সময় আমরা মুক্তি পাব।’
২৩ বছর বয়সী আমান্ডা আবু শারখ মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের অভ্যর্থনা জানাতে রামাল্লায় হাজির হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি এই মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করতে এবং সেই আবেগ অনুভব করতে, যেমন বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা আজ তাদের মুক্তির দিন অনুভব করছেন।’
সংবাদসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আজ মুক্তি পাওয়া সকল বন্দি আমাদের পরিবারের মতো। রক্তের সম্পর্কের না হলেও তারা আমাদের অংশ।’
বন্দীদের মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে বন্ধুদের সাথে এসেছেন ২০ বছর বয়সী মুহাম্মদ। কিছু দিন আগে তিনি নিজেও ইসরায়েলের ওফার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারে অনেক নির্দোষ মানুষ, শিশু ও নারী বন্দি রয়েছেন। পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার এই মুহূর্ত অত্যন্ত আনন্দের।’
এ বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হলো। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৪২ দিনের মধ্যে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি দেবে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা দুই সপ্তাহ পর শুরু হবে।
তবে চুক্তির আওতায় ঠিক কত ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন, তার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে এ সংখ্যা হতে পারে ১ থেকে ২ হাজার।
তথ্যসূত্র:
1. Tears, hugs greet 90 Palestinian women, children freed from Israeli prisons
– https://tinyurl.com/ykrzp82h
2. Israel frees 90 Palestinian women and minors from prison on day two of Gaza ceasefire
– https://tinyurl.com/yckf8hre