
ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তাঁর নাম খান মুহাম্মদ। তিনি একজন আফগান নাগরিক। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৭ বছর, এর মধ্যে প্রায় ২০ বছর তিনি মার্কিন সামরিক কারাগারে বন্দি হিসেবে জীবন পার করেছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ দেশ ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে ফিরে এসেছেন।
২০০৬ সালে মার্কিন বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং জালালাবাদ বিমানবন্দরে হামলা ও মার্কিন নাগরিকদের হত্যার কথিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
খান মুহাম্মদ আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর দুই দশকের উপস্থিতির সময় অবৈধভাবে আটক হওয়া শত হাজারো আফগানের একজন। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা জিনহুয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মার্কিন সামরিক কারাগারের অমানবিক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ‘গ্রেপ্তারের সময় আমার সন্তানরা ছোট ছিল। মুক্তির পর যখন বাড়ি ফিরি, তখন আমি তাদের কাউকেই চিনতে পারিনি। একে একে তারা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর চিনতে পারি।’
গ্রেপ্তারের পর তাঁকে প্রথমে জালালাবাদ বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়, এরপর বাগরাম সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে তাঁকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমাকে চোখ বেঁধে, মুখে কাপড় বেঁধে, হাত-পা শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল। কানেও কিছু ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যাতে আমি কিছু শুনতে না পারি।’
খান মুহাম্মদ মার্কিন কারাগারের কঠিন বাস্তবতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি ছোট সেল মাত্র ৫ মিটার চওড়া ও ৬ মিটার লম্বা ছিল, যেখানে ১৫ থেকে ২০ জন বন্দিকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। সময়ের হিসাব থাকত না। দিন আর রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না।’
তবে এত কষ্টের পরও পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।’
খান মুহাম্মদের অভিজ্ঞতা আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর দুই দশকের উপস্থিতির বাস্তবচিত্র তুলে ধরে। আগস্ট ২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়লেও, বেসামরিক হতাহত, নির্বিচার গ্রেফতার এবং বিমান হামলার ঘটনা এখনো আফগানদের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে রেখেছে।
তথ্যসূত্র:
1. Afghan Man Shares Harrowing Experience of Illegal Detention by U.S. Forces
– https://tinyurl.com/bdp3hauw