
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও এই বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে। দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামবিদ্বেষ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত দুটি টাস্কফোর্সের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস যখন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে, তখনই ওই টাস্কফোর্স দুটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার এ দুটি দল নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আলাদা আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের ভেতরে বিদ্যমান বৈষম্য, ভয়ের পরিবেশ এবং পারস্পরিক সহানুভূতির অভাব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হার্ভার্ডের ৯২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী মনে করছেন, গাজা সংকটে মত প্রকাশ করলে তারা শিক্ষা ও কর্মজীবনে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ক্যাম্পাসে তাদের ওপর যেকোনো সময় সহিংস হামলা হতে পারে।
এক মুসলিম শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। ক্যাম্পাসে কিছু ট্রাক ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ছবি দেখানো হচ্ছে, যারা ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এরপর চাকরি হারিয়েছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, যদি একই ঘটনা ইহুদীবিদ্বেষ নিয়ে ঘটত, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি কঠোর ব্যবস্থা নিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা তো বটেই, যেসব মুসলিম শিক্ষার্থী অতটা সরব নন, তারাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। হিজাব পরেন এমন শিক্ষার্থীদেরও মৌখিক হেনস্তার শিকার হতে হয়। তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ডাকা হয়।
প্রতিবেদনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ‘ডক্সিং’ (ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ফাঁস করে দেওয়া)। শুধু শারীরিক নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্যও ডক্সিং হুমকিস্বরূপ। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশেষভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. Harvard antisemitism and Islamophobia task forces find widespread fear, bigotry
– https://tinyurl.com/yc2s7fny
2. Harvard reports find students face anti-Muslim and anti-Jewish bias
-https://tinyurl.com/uydfjf7v