নদীতে বাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধায় অরক্ষিত অর্ধশতাধিক বাঁধ; বন্যা আতঙ্কে এলাকাবাসী

0
99

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের বাধায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের জকিগঞ্জে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ডাইক) মেরামত করতে পারছে না। ফলে অর্ধশতাধিক স্থানের বাঁধ অরক্ষিত। গত বছরের কয়েক দফা বন্যার ধকল কাটাতে না কাটাতেই চলতি বছর আবারও বন্যার আতঙ্কে এলাকাবাসী।

বিএসএফের বাধায় ডাইকের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্ষার আগে ভারতীয় বাধা উপেক্ষা করে ডাইক মেরামত করতে না পারলে বানের পানিতে ডুববে জকিগঞ্জ। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সুরমা-কুশিয়ারার বেড়িবাঁধের (ডাইকের) অন্তত ৪৫-৫০টি স্থান ভেঙে পানি ঢুকে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট। সেই ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়েছে গ্রামগঞ্জে।

বন্যা-পরবর্তী সময়ে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয় পাউবো। দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারও নিয়োগ দিয়ে বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শুরু হলে বাধা দেয় বিএসএফ। এলাকাবাসী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিগত বন্যার পরে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার পর নতুন করে জকিগঞ্জ পৌরসভার মাইজকান্দি, সদর ইউপির ছবড়িয়া, বাখরশাল, শষ্যকুঁড়ি, মানিকপুর, লালোগ্রাম, ফেউয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ডাইকের আশপাশের মাটি ধসে পড়ছে নদীতে।

উপজেলার অর্ধশতাধিক স্থানের ডাইক মারাত্মক ঝুঁকিতে। অনেক জায়গায় অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বিশেষ করে গত বছরের বন্যায় যেসব এলাকার ডাইক ভেঙে কয়েক দফায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল সেই ডাইকগুলো মেরামত করা হয়নি। এরই মাঝে বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অথচ এই ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে কয়েক বছরে নদীভাঙনের কবলে পড়ে হাজারো পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই মধ্যে বহু হাটবাজার, ঘরবাড়ি, গাছপালা, জায়গাজমি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ডান তীরে ৪১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন চলছে।

জকিগঞ্জ উপজেলায় ‘সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চারটি প্যাকেজে সুপ্রাকান্দি, মানিকপুর, রারাই সেনাপতির চক, বড়চালিয়া ও রহিমপুর নামক স্থানে ১ দশমিক ৮০০ কিমি নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ শেষ হয়েছে। অপরটি চলমান।

এ ছাড়া ‘বন্যা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন জরুরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ার নদীর ডান তীরে ৪১ কিমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুনর্বাসন কাজ ও অতি ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের জন্য এরই মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায়।

ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে এখন কুশিয়ারা নদীর ছয় কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ বসাতে হবে। এর জন্য ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। গত বছরের বন্যার পর নতুন করে কয়েক কিলোমিটার জায়গা সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে বিলীন হয়েছে। পাউবোর ওই সূত্র আরো জানায়, কুশিয়ারার ৪১ কিলোমিটার ও সুরমার ২৫ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত নদী।

জকিগঞ্জ সদর ইউপির ছবড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, গত বছরে ছবড়িয়া গ্রামের ডাইক ভেঙে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল টানা চারবার। এক বছর গড়িয়ে গেলেও এখনো সেই ডাইক মেরামত করা হয়নি। বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করতে না পারলে আবারও পানি ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। লোকজন কোনো ত্রাণ চায় না, দ্রুত টেকসই ডাইক চায়।

ছবড়িয়া গ্রামের বহু পরিবারের জায়গা কয়েক বছরের ভাঙনে ভারতে চলে গেছে। বসত ভিটাহীন মানুষজন এখন অন্যত্র বসবাস করছেন। শষ্যকুঁড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিন জানান, গত বছরের বন্যার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। এবার বন্যা হলে মানুষজনের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

কুশিয়ারা নদীর ছবড়িয়া, ছয়লেন, মাইজকান্দি, শষ্যকুঁড়ি, বাখরশাল, মানিকপুর, রারাই এবং সুরমা নদীর বাল্লা, শরীফাবাদ ও হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গত বছরের বন্যার সময় ভেঙে ছিল।

সেই বাঁধগুলো বিএসএফের বাধার কারণে মেরামত করতে না পারলে আগামী বর্ষায় বিনা বাধায় পানি ঢুকবে বিভিন্ন এলাকা দিয়ে। এতে উপজেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বিএসএফের বাধায় সুরমা ও কুশিয়ারার অন্তত ৩০টি স্থানে বাঁধ নির্মাণের কাজ করা যাচ্ছে না।


তথ্যসূত্র:
১. বিএসএফের বাধায় জকিগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত ভণ্ডুল
– https://tinyurl.com/3zua7mzy

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত নিরীহ বাংলাদেশি কৃষক
পরবর্তী নিবন্ধপশ্চিম আফ্রিকায় মুজাহিদদের দুর্দান্ত ৮৮টি অপারেশন: ৩৪টিতেই ৫৩০ শত্রু সেনা নিহত এবং ৫২টি ঘাঁটি বিজয়