আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চালের দাম

0
22

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে কিছুতেই লাগাম পরানো যাচ্ছে না। অথচ চলতি বছর দেশে উৎপাদন ও মজুতে রেকর্ড গড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামও নিম্নমুখী। গত বছরের শেষ ভাগের তুলনায় পণ্যটির দাম কমেছে ২৬ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণসহ সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে এটিকে অস্বাভাবিক বলছে বাজারবিশ্লেষক ও ক্রেতা-বিক্রেতারা।

ট্রেডিং ইকোনমিকস বলছে, বিশ্ববাজারে চালের দাম এক মাসে কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছরের সাত মাসে কমেছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর এক বছরে একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ীও চলতি বছরে সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে।

সংস্থাটির মতে, সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারতের রেকর্ড উৎপাদন ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ায় বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে চালের দাম। এর পাশাপাশি উৎপাদন বেড়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশগুলোতেও।

বিশ্ববাজারে ক্রমেই নিম্নমুখী হলেও বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম উল্টোপথে হাঁটছে। রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর সোমবারের (১১ আগস্ট) বাজার দরের তথ্য অনুযায়ী গত একমাসে নতুন করে চালের দাম না বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরুজাতের নাজিরশাইল ও মিনিকেট ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, মাঝারিজাতের পাইজাম ও আটাশ ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোটাজাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দাম ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) টিসিবির ঢাকা মহানগরীর দৈনিক খুচরা বাজার দরের তথ্য অনুযায়ী, সরু চাল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চলতি বছরের বোরো মৌসুমের শুরুতে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমলেও ঈদুল আজহার পর জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়তে থাকে, বর্তমানে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। জুলাই মাসেও বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা বেড়েছে।

এদিকে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অন্যান্য পণ্যের দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমে এলেও চালের দাম কমেনি, বাড়তি চাপ যোগ করছে মূল্যস্ফীতিতে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে এবং খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও চালের দামে অস্বস্তি রয়েছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান মে মাসের ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে জুনে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। জুনে সব ধরনের চালেই মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশে পৌঁছে। শুধু মাঝারি মানের চালই খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। আর মোটা চালের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। জুলাই মাসে মাঝারি চালের দাম আরো বেড়েছে, যা বড় উদ্বেগের কারণ সংশ্লিষ্টদের।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাবুবাজারের ইসলাম রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের চালের বাজার এখন আর দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার চাতাল ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। চালের বাজার কর্পোরেট হাউসগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ কোম্পানিগুলো চালের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ালে সরকার অজ্ঞাত কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে।


তথ্যসূত্র:
১. চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পরানো যাচ্ছে না
– https://tinyurl.com/3n9k7arn

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল কাসসাম, আল–আকসা ও সালাহউদ্দিন ব্রিগেডের যৌথ অভিযানে ২ দখলদার সেনা নিহত
পরবর্তী নিবন্ধময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার গোপন টর্চার সেল; সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে চাঁদা আদায়