
গাজা অবরোধ ও ধ্বংস নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভ যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন প্রপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলকে ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। ড্রপ সাইট নিউজ-এর সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ২ মার্চ ইসরায়েলি সরকার গাজায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই নেসেটে জনসংযোগ (পিআর) প্রচারণা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অবরোধের ফলে বিশ্বের কাছে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সংসদ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এর পর থেকে অন্তত ১৩১ শিশুসহ ৩৬৭ জন গাজাবাসী অনাহারে মারা গেছেন। এর মধ্যেই জুনের শেষ দিকে ইসরায়েলি সরকার গুগলের সঙ্গে ছয় মাসের বিজ্ঞাপন প্রচারণার জন্য ৪৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। সেই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপকভাবে নিন্দিত কুখ্যাত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত সাহায্য কেন্দ্রগুলোতে এবং গাজার বেসামরিক এলাকায় রোজ বিমান হামলা চালিয়ে অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে।
ড্রপ সাইট নিউজ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই প্রোপাগান্ডা প্রচারণার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরবি ভাষী কুখ্যাত মুখপাত্র আভিচাই আদরাই। সে নেসেট সদস্যদের প্রস্তাব দেয়, ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিশ্বকে বুঝানো হবে যে, গাজায় কোনো ক্ষুধা নেই।
এই প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের সবচেয়ে আলোচিত বিজ্ঞাপনগুলির মধ্যে একটি গুগল-মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রকাশিত হয়, যেখানে ফিলিস্তিনিদের খাবার তৈরি এবং খাওয়া অবস্থায় দেখানো হয় এবং এর শেষে লেখা ছিল: “গাজায় খাবার আছে। অন্য যেকোনো দাবি মিথ্যা।” ভিডিওটি প্রচারিত হয় জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণার ঠিক আগে।
ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৬০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে, যার বেশিরভাগই এসেছে পেইড প্রমোশনের মাধ্যমে।প্রচারণাগুলো মূলত পরিচালিত হচ্ছে ইউটিউব ও গুগলের Display & Video 360 প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, যা সরকারি নথিতে প্রচারণা হিসেবে চিহ্নিত।
এদিকে, শুধু গুগল নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এর জন্যও ইসরায়েল ৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রভাবশালীদের গাজায় নিয়ে গিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর উদ্যোগ নেয়। বিপরীতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের নিয়মিতভাবে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে, প্রকাশ্যে ইসরায়েলের কয়েকজন মন্ত্রী গাজাবাসীকে অনাহারে রেখে তাদের অঞ্চল ছাড়তে বাধ্য করার পক্ষে মত দিয়েছে। কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছে, “কোনো পানি নেই, কোনো বিদ্যুৎ নেই, তারা হয় অনাহারে মারা যাবে অথবা আত্মসমর্পণ করবে।” ঐতিহ্য মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু পর্যন্ত বলেছে, “ফিলিস্তিনিদের অনাহারে থাকা উচিত, যদি না তারা গাজা ছেড়ে যায়।”
এর আগে, গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন জাতিসংঘকে ‘প্রকাশ্যে ইহুদি-বিদ্বেষী’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। একই সময়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ গুগলকে ইসরায়েলের গণহত্যা থেকে লাভবান হওয়ার অভিযোগ আনে।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তবতা যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তখন ইসরায়েলের কোটি ডলারের প্রপাগান্ডা প্রচারণা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় আড়াল করতে ইসরায়েলের এই কোটি ডলারের প্রপাগান্ডা প্রচারণা মূলত তথ্য সন্ত্রাসের এক ভয়াবহ রূপ। প্রযুক্তি জায়ান্টদের সহযোগিতায় তৈরি এই বিকল্প আখ্যান শুধু সত্যকে বিকৃত করছে না, বরং বৈশ্বিক মিডিয়া ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তথ্যসূত্র:
1. Google’s $45 Million Contract With Netanyahu’s Office to Spread Israeli Propaganda
– https://tinyurl.com/y8x399a6
2. Google involved in $45M deal with Netanyahu’s office to amplify propaganda: Report
– https://tinyurl.com/2s4nxcp5


