“গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: ২ বছর পর প্রমাণ (!) পেল জাতিসংঘ”

0
111

আল ফিরদাউস এর সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম –

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ আর অবরোধের পর অবশেষে জাতিসংঘ ঘোষণা দিল—দখলদার ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে! দুই বছর ধরে শিশুদের লাশ, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল, পুড়ে ছাই হওয়া মসজিদ, দুর্ভিক্ষে তিলে তিলে মারা যাওয়া হাজারো মানুষের করুণ চিত্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও জাতিসংঘের চোখে তা যেন যথেষ্ট ছিল না। অবশেষে অসংখ্য মুসলিমের রক্ত ঝরার পর জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন “প্রমাণ” খুঁজে পেয়েছে। প্রশ্ন জাগে—তাহলে এত দিন তারা কোথায় ছিল?

জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন ১৬ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, দখলদার ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্তত চারটি অপরাধ করেছে— পদ্ধতিগত হত্যা, শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর ক্ষতি সাধন, খাদ্য, পানি ও ওষুধ বন্ধ করে বেঁচে থাকার উপায়-উপকরণ ধ্বংস করা এবং জন্মপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা।

কমিশনের প্রধান নভি পিল্লে আরও জানিয়েছে, দখলদার ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় মুসলিম জনসংখ্যাকে ধ্বংস করার পথে এগিয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এ কি সত্যিই নতুন কিছু? গাজার ধ্বংসস্তূপে রক্তমাখা শিশুদের নিথর দেহ, মায়ের বুকফাটা আহাজারি, ভেঙে পড়া মসজিদের মিনার—এসব কি এত দিন জাতিসংঘের দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল? দুই বছর ধরে রক্তের স্রোত বইতে থাকল, উম্মাহর লাশের উপর লাশ জমল—এসব কি দুই বছর পর এসে জাতিসংঘের নজরে এলো? তবে জাতিসংঘের কাজ কি কেবল মুসলিম রক্ত ঝরার হিসাব কষা—যেন লাশ গোনার পরই তারা “সত্য” খুঁজে পায়?

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হার্জগ, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োব গ্যালান্ট প্ররোচনার মাধ্যমে গণহত্যায় দায়ী। কিন্তু বাস্তবতা হলো—দুই বছর ধরে তাদের প্রকাশ্য উসকানিমূলক বক্তব্য, সেনাদের নৃশংসতা আর শিশু হত্যার দৃশ্য সবার সামনেই ছিল। তবু বিশ্বশক্তি এবং জাতিসংঘ নীরব ছিল।

তদন্ত কমিশন দাবি করেছে, গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া, দুর্ভিক্ষ তৈরি এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে—অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে, অপরাধীদের বিচার করতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘ কি কখনো সত্যিই ইসরায়েলকে থামাতে পারবে? নাকি এটি তাদের আরেকটি ‘নিন্দা প্রস্তাব’-এর মতো ধুলোয় ঢাকা পড়ে যাবে?

এদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে “ভুয়া” ও “পক্ষপাতদুষ্ট” বলেছে ইসরায়েল। কমিশনের সদস্য ক্রিস সিডোটি এই প্রতিক্রিয়াকে ব্যঙ্গ করে বলেছে, ইসরায়েলের এসব মন্তব্য এতই পুনরাবৃত্তিমূলক ও গতানুগতিক যে মনে হয় সেগুলো যেন “ChatGPT দিয়ে লেখা।” তার মতে, ইসরায়েল সবসময় প্রমাণ উপেক্ষা করে কেবল মিথ্যা অজুহাতের আশ্রয় নেয়, যা এখন আর আন্তর্জাতিক মহল গুরুত্বের সাথে নেয় না।

গাজায় দুই বছর ধরে রক্ত ঝরার পর অবশেষে জাতিসংঘ মুখ খুলেছে—কিন্তু এই ঘোষণায় বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আসবে কি? নৃশংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে শুধু প্রতিবেদন আর নিন্দা জ্ঞাপন করে দায়িত্ব শেষ করা কি বিশ্ব বিবেকের প্রমাণ? আসলে মুসলিম উম্মাহর রক্তের কোনো মূল্য পশ্চিমা শক্তি ও তাদের হাতের পুতুল জাতিসংঘের কাছে নেই। নয়তো ইসরায়েলি বর্বরতার নথিপত্র জমা হয়, অথচ বিচার ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ থেকে বিশ্ব শক্তি মুখ ফিরিয়ে থাকে। এই পক্ষপাত এবং প্রহসনমূলক পদক্ষেপগুলোই প্রমাণ করে—মুসলিমদের মুক্তি ও নিরাপত্তা জাতিসংঘের সভাকক্ষে নয়, বরং উম্মাহর ঐক্য ও প্রতিরোধেই নিহিত।


তথ্যসূত্র:
1. Israel has committed genocide in Gaza, UN inquiry commission finds
– https://tinyurl.com/4xhahv9x

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইত্তেহাদুল মুজাহিদিনের হামলায় এক শত্রু সেনা নিহত, বন্দী আরও এক
পরবর্তী নিবন্ধমাদক নির্মূলে তালিবানের ব্যর্থতা সংক্রান্ত ট্রাম্পের দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইমারতে ইসলামিয়া