
আরাকান রাজ্যের বুথিডং টাউনশিপে এক মুসলিম যুবকের শিরশ্ছেদ করা দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম আবু তাহের (২৪)। তিনি বুথিডং টাউনশিপের ‘বাগোনি নাহ টাউং ইওয়া’ গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাকে গত ২১ সেপ্টেম্বর ‘কিন চাং’ গ্রামে বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির এক সদস্য আটক করেছিল, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর শিরশ্ছেদ করা লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ৩ অক্টোবর আরাকান নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আবু তাহেরকে আটক করেছিলো ‘অং নাইং ও’ নামে এক সদস্য, সে আরাকান আর্মির বুথিডং মিলিশিয়া প্রশাসন ঘাঁটি সেকশন ৬-এ কর্মরত। স্থানীয়ভাবে ‘অং নাইং ও’ কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
আবু তাহেরের পরিবার জানিয়েছে, তিনি পেশায় মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালক ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি কাজের উদ্দেশ্যে ‘নিয়াউং চাং’ গ্রামে গিয়েছিলেন, কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন তার বাবা-মা মিলিশিয়া ঘাঁটিতে খোঁজ নিতে গেলে সন্ত্রাসবাদী আরাকান আর্মির কর্মকর্তারা তাকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা তাহেরের আটক হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, সন্ত্রাসী ‘অং নাইং ও’ তিনজন রোহিঙ্গা পুরুষকে জোর করে আবু তাহেরের লাশ একটি ধানক্ষেতে কবর দিতে বাধ্য করে। পরে তার মোটরসাইকেলটি ‘কিন চাং’ গ্রামে উদ্ধার হয়। গ্রামবাসীরা জানান, ‘অং নাইং ও’ সন্ত্রাসবাদী আরাকান আর্মির সবচেয়ে নিষ্ঠুর সদস্যদের মধ্যে অন্যতম।
এই ঘটনার দুই দিন পর, ২৩ সেপ্টেম্বর, ‘ঙা বি চাং’ গ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এক রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীকে মারধর করে তার থেকে ৭ লক্ষ কিয়াত (প্রায় ১৬০ মার্কিন ডলার) ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে এক রাখাইন নারী হস্তক্ষেপ করলে তাঁকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিয়াত ফেরত দেওয়া হয়।
তবে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, পরে সন্ত্রাসবাদী আরাকান আর্মির দুজন সদস্য ‘গু দা বিন’ ও ‘ঙা বি চাং’ গ্রামে গিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের হুমকি দেয়, যার ফলে এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদী মিলিশিয়া গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’ ২০২৪ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বুথিডং টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারপর থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করা রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নিপীড়ন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আরাকান আর্মি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, মূল্যবান সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, বহু পরিবারকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং প্রায় প্রতিটি রোহিঙ্গা গ্রামের প্রবেশদ্বার ও প্রস্থান পথে নিরাপত্তা চেকপোস্টের নামে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
তথ্যসূত্র:
1. Beheaded Body of Rohingya Motorcycle Driver Found After Arbitrary Arrest
– https://tinyurl.com/2jsyv8w3


