পশ্চিমা প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান শায়েখ আহমাদুল্লাহ’র

0
171

জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক ও স্কলার শায়েখ আহমাদুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ) আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বানকে খুবই যৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের মোড়লদের অনুসরণ করে একটি মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন রাখা দাসসুলভ মানসিকতার পরিচায়ক।

গত ০৪ অক্টোবর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক প্রশ্নকারীর জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এক ফলোয়ার প্রশ্ন করেন- বাংলাদেশের কয়েকজন আলেম সম্প্রতি আফগানিস্তান সফর করেছেন। তারা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টাকে যৌক্তিক মনে করেন কিনা?

জবাবে শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘প্রথম কথা হলো আফগানিস্তান ভৌগলিকভাবে আমাদের খুবই নিকটবর্তী একটি দেশ এবং ভৌগলিকভাবে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা একটি দেশ। দ্বিতীয়ত, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম এবং আফগানিস্তানও মুসলিম দেশ। ঐতিহাসিকভাবে এবং বাস্তবতার নিরিখে তাদের সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা জরুরী। বিশেষ করে সেখানে একটি টেকসই সরকার আছে এবং সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে বর্তমান সরকার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোন যুক্তিতে আমাদের দেশ তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে? রাশিয়া, চায়নার মত অনেক দেশ তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের সাথে এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-পাকিস্তান পর্যন্ত করছে। সেখানে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধাটা কোথায়?’

তিনি বলেন, ‘আজকের পৃথিবীর মোড়লরা যেটাকে বৈধ বলছে, সেটাকে আমরা বৈধ মনে করছি। তারা যেটাকে অবৈধ বলছে, সেটাকে আমরা অবৈধ মনে করছি। এই দাসসুলভ মানসিকতা আমাদের পরিহার করা দরকার। সাধারণ মানুষের পালস আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্যই জানেন এবং বোঝেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে গণতন্ত্রের নাম দিয়ে সাধারণ মানুষের সামনে মুলা ঝুলিয়ে তাদেরকে তারা দাস বানিয়ে রাখেন এবং সাধারণ মানুষের ইচ্ছা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী কাজ তারা অনবরত করে থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আফগানিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই আমাদের, তবে সম্পর্ক স্থাপনেই আলেমদের এই সফর। অতএব ওলামায়ে কেরাম যেটি চেয়েছেন বা যেটির আহ্বান করেছেন, সেটি খুবই যৌক্তিক আমি মনে করি। আমাদের নানা কারণে তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করাটা সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর মধ্য থেকে একটি। এই যে একটা অচ্ছুত ভাব যে তাদের সাথে সম্পর্ক করা যাবে না, তাদের নামও মুখে নেওয়া যাবে না, তাদের কাছে যাওয়াই যাবে না, এই অচ্ছুত ভাব আমাদের গোলামি এবং দাসত্বের যে মানসিকতা, পশ্চিমাদের থেকেই কিন্তু আমাদের মধ্যে এটি সৃষ্টি হয়েছে।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই জিঞ্জির আমাদের ভাঙতে হবে এবং ভাঙা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ এভাবে পৃথিবীর শক্তিশালী বা মোড়লদের দাসে পরিণত হয়ে যাবে, এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাকর একটি বিষয়। একটি দেশ ভালোভাবে চলছে, তাদের দেশের শাসক এবং জনগণের মধ্যে কোনো অসুবিধা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ পৃথিবীর মোড়লরা তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি, সেজন্য আমরা তাদেরকে একদম অচ্ছুত মনে করব, তাদের সাথে মিশতে গেলেও সেটাকে অপরাধ মনে করব, এটা গোলামীসূলভ মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। তাই আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সরকারের উচিত আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা।


তথ্যসূত্র:
1. বাংলাদেশি আলেমদের আফগান সফর সম্পর্কে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
– https://tinyurl.com/449p7cwe

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধবিরতির আহ্বান অগ্রাহ্য করে গাজায় ফের দুর্বৃত্ত ইসরায়েলের হামলা, নিহত অন্তত ৭০
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় লন্ডনে গ্রেফতার প্রায় ৫০০