
দিল্লিতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এসব গণমাধ্যম দাবি করছে, পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান হাফিজ সাঈদ নাকি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছে।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের এই দাবি ভিত্তিহীন ও অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাই ঘটুক না কেন, ভারতীয় মিডিয়া আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু এই অভিযোগ বিশ্বাস করার মতো কোনো কারণ নেই। কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসব বিশ্বাস করবে না।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ নভেম্বর দিল্লির লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও বহু লোক আহত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিস্ফোরণের পর গোটা ভারতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এরপরই ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে, হাফিজ সাঈদ বাংলাদেশ থেকে হামলার পরিকল্পনা করেছে। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
এর আগেও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশবিরোধী নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে। যেমন, তারা দাবি করেছে— বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, হিন্দু নারীরা নাকি শাখা-সিঁদুর পরে ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
তাছাড়া, ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি দাবি করেছে, ঢাকায় তুরস্কভিত্তিক এনজিও-সমর্থিত একটি কথিত ইসলামপন্থী সংগঠন ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তারা ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর মানচিত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে ভারতের কয়েকটি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেয়নি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
গতবছর ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। অথচ ভারতীয় গণমাধ্যম সেটিকে ‘অস্ত্রবোঝাই জাহাজ’ হিসেবে প্রচার করে। একইভাবে, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের পরও তারা ভ্রান্তভাবে প্রচার করে যে, তিনি নাকি চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী ছিল এবং সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বেড়েছে। বাংলাদেশভিত্তিক একটি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর থেকে ভারতীয় উৎস থেকে পরিচালিত একাধিক অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। শুধু গত এপ্রিল মাসেই তারা ২৯৬টি ভুয়া খবর শনাক্ত করেছে, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে প্রচার করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. দিল্লিতে বিষ্ফোরণের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের
– https://tinyurl.com/3dkute3s
2. Misleading reports of attacks on Bangladesh Hindus circulates in India
– https://tinyurl.com/57znctcz


