সর্বপ্রথম নিজের জীবনে শরিয়ত বাস্তবায়ন করুন, জনগণের জন্য আদর্শ হোন: ফকিহদের প্রতি আমীরুল মু’মিনীন হাফিযাহুল্লাহ

0
164

আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশে ফিকহ কাউন্সিলের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অন্যান্য আলেমদের নিয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন ইমারতে ইসলামিয়ার সর্বোচ্চ আমীর মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ।

তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও নসিহত পেশ করেছেন। তিনি দেশ ও মুসলমানদের কল্যাণে আলেমদের অবদানের প্রশংসা জ্ঞাপন করেছেন। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে ইসলামী আইনশাস্ত্র তথা ফিকহ কাউন্সিলের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বিশদ বক্তব্য প্রদান করেছেন।

১৯ নভেম্বর ইমারতে ইসলামিয়ার উপমুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত হাফিযাহুল্লাহ তাঁর অফিসিয়াল এক্স পোস্টের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত বার্তা তুলে ধরেছেন।

সেমিনারে আমীরুল মু’মিনীন হাফিযাহুল্লাহ ফকিহদের উদ্দেশ্যে বলেন, সর্বপ্রথম নিজের জীবনে শরিয়ত বাস্তবায়ন করুন, জনগণের অনুসরণের জন্য নিজেকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলুন।

তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা যদি কারও জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করেন, তবে তিনি তাকে দ্বীনের ফিকহ শিক্ষা দান করেন। সর্বোত্তম জ্ঞান হল ফিকহ শাস্ত্রের জ্ঞান। কারণ ফিকহ শাস্ত্র হল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের সারাংশ, যার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের হালাল-হারাম বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।

তিনি দ্বীনের ফকিহ এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, একজন ফকিহ দ্বীনের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, তিনি হালাল-হারাম সম্পর্কে জানেন, তিনি জানেন দ্বীনের ফরজ, ওয়াজিব বিধান, তিনি আরও জানেন কোন বিধান মাকরূহে তানজিহি আর কোন বিধান মাকরূহে তাহরিমী, একইসাথে তিনি মতবাদগত বিধান সম্পর্কেও জ্ঞান রাখেন।

ফকিহগণের মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন ফকিহ মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্যান্য মানুষদের তুলনায় অধিক সম্মানের অধিকারী। তাঁরা মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহ তাদেরকে এই মর্যাদা দান করেছেন। মুসলমানদের কল্যাণের জন্য ফকিহদের মনোনীত করেছেন। কারণ তাঁরা হালাল-হারাম, ভালো-মন্দ চিহ্নিত করতে পারেন। তাঁরা মানুষের উপকার সাধন করেন ও সমস্যার সমাধান করেন।

আমীরুল মু’মিনীন হাফিযাহুল্লাহ আরও বলেন, ইলম অর্জন ও তা বিলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সফর করা আল্লাহর পথে জিহাদের মত। ফকিহগণ আল্লাহর দ্বীন বুলন্দের জন্য সফর করেন এবং ইলমি মজলিসে সমবেত হন। ফিকহ কাউন্সিলে সত্য উন্মোচন করা হয়, বিভিন্ন বিষয় সুস্পষ্ট করা হয়, ইজতিহাদ পরিচালিত হয়, ইলম আদান-প্রদান হয় এবং আলেমদের মাঝে মুহব্বতের সম্পর্ক গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়।

আলেমদের মহান দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা আলেমগণকে নবীদের ওয়ারিশ বানিয়েছেন। এই জন্য যে, তাঁরা যেন ইলম অর্জন করেন এবং মানুষকে ইসলামের পথে হেদায়েত করেন। মানুষকে শরিয়তের আলোকে হেদায়েতের পথ দেখানো আলেমদের দায়িত্ব। এই জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তাদের জবাবদিহিতা রয়েছে।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিবেশ আলেমদের অনুকূলে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কেননা বর্তমানে তাঁরা হালাল-হারাম সংক্রান্ত যেকোন বিধান বিনা বাঁধায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে পারেন। তিনি ফকিহদের ইলম অর্জন জারি রাখতে এবং তা মানুষদের মধ্যে পৌঁছে দিতে উপদেশ দেন।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি পারস্পরিক কাদা ছুড়াছুড়ি তথা পরস্পরের বিরোধিতা করা থেকে বেঁচে থাকতে আলেমদের নসিহত করেন। তিনি তাদের নসিহত করে আরও বলেন, জনগণের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করুন, দুনিয়ার লোভ পরিত্যাগ করুন, সত্যকে গোপন করবেন না, সৎ কাজে আদেশ করুন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করুন।

তিনি ফিকহ কাউন্সিলের আলেমদের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেন। জনগণ ও কর্মকর্তাদের সংশোধন করতে তাদেরকে আহ্বান জানান। ইমারাতে ইসলামিয়ার জারি করা ডিক্রিগুলো প্রথমে নিজেরা মেনে চলতে আলেম ও কর্মকর্তাদের তিনি সচেষ্ট হতে বলেন। অতঃপর জনগণের নিকট ডিক্রিসমূহ মেনে চলার গুরুত্ব বর্ণনা করতে তাদের আদেশ দেন।

উপস্থিত আলেমগণ আমীরুল মু’মিনীন হাফিযাহুল্লাহ’র প্রতি তাদের আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করেন। ইসলামী শরিয়াহ’র সমর্থনে আমৃত্যু অবিচল থাকতে তাঁরা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


তথ্যসূত্র:
1. https://tinyurl.com/6k5aex2f

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামপুরায় বাসে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশিদের হাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, সমালোচনার ঝড়