
আল ফিরদাউস এর সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম
গণতন্ত্রের ট্র্যাজেডি ও প্রতারণার দীর্ঘ রাত
আজ কথা বলবো ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে, ইনশাআল্লাহ।
কীভাবে পাশ্চাত্য শক্তি যুগের পর যুগ মুসলিম উম্মাহর ঘাড়ে বসে থেকে নিজেদের প্রভুর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আর আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে তাদেরই বানানো কুফরী মতবাদের জিঞ্জির: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ।
গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমেরিকা ও জাতিসংঘ মুখে “মানবাধিকার” ও “স্বাধীনতার” মিথ্যে বুলি আওড়ায়,
কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের দেশে এই অসাড় গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তো তথাকথিত পাঁচ মহাশক্তির কথাই শেষ কথা!
বিশ্বে গণতন্ত্রের ঠিকাদার সাজা আমেরিকার ভেতরেই বিদ্যমান- বর্ণবাদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচারের গহ্বর।
কিন্তু মুসলিম বিশ্বের জন্য তাদের পরিকল্পনা ভিন্ন।
তারা আমাদেরকে দুর্বল, ভীত, নির্ভরশীল ও বিভক্ত করতে চায়, যাতে করে আমরা আজীবন তাদের প্রভুত্ব স্বীকার করে চলি।
আর সেই লক্ষ্য পূরণে কিছু দেশি শাসককে ব্যবহার করে ইসলামী শরিয়াহকে রাষ্ট্র থেকে সরিয়ে,
গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে “রোল মডেল” হিসেবে।
যাতে মুসলমানরা আল্লাহর বিধান থেকে দূরে সরে গিয়ে,
পাশ্চাত্যের তৈরী স্বার্থবাদী ও বস্তাপঁচা আইনেই নিজেদের ভবিষ্যত খুঁজে বেড়ায়।
এই প্রতারণা, এই অন্ধকার, এই প্রহসনের চিত্র তুলে ধরতেই আজকের পর্ব।
গণতন্ত্রের দীর্ঘ প্রতারণা : রঙিন স্বপ্নের আড়ালে উম্মাহকে মেরুদণ্ডহীন করা
বলছিলাম- এই ভূখণ্ডের মুসলিম অধিবাসীদের ইতিহাস যেন এক অনন্ত আর্তনাদ।
যে আর্তনাদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাওহিদবাদী মুসলমানদের কাঁদিয়েছে, আজও সেই কান্না থামেনি।
আমাদেরকে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রই মুক্তির পথ! গণতন্ত্রেই রয়েছে সমতা, মানবাধিকার, ধর্মীয় অধিকার, মাজলুমদের মুক্তি! কিন্তু বাস্তবে এসব কথা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্মম পরিহাস, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতারণা।
কারণ গণতন্ত্র আমাদের উপহার দিয়েছে- আশার বৃষ্টি নয়, বরং প্রতারণার মরুভূমি।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে ক্ষমতার ফাঁদে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, রাতের অন্ধকারে ভোটের বাক্স ভরে গেছে। কিন্তু মুসলিম জনতার জীবনে ন্যায় ও ইনসাফের একটি কণাও নেমে আসেনি।
এ যেন এক অন্তহীন প্রতারণার নাটক! অভিনেতা বদলায়, মুখোশ বদলায়; কিন্তু গল্প একই থাকে।
ক্ষমতা বদলায়, শোষণ বদলায় না!
গণতন্ত্র নামক কুফুরী ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস করে সাধারণ মুসলমানরা বারবার দেউলিয়া হয়েছে।
গণতন্ত্রকে সাজানো হয় রঙিন কথামালায়- মানবাধিকার, স্বাধীনতা, প্রগতিশীলতা! দেখতে ঝকঝকে, কিন্তু ভেতরটা পঁচা কাঠের মতো ভঙ্গুর।
এ কুফুরী ব্যবস্থার শিকড় তো সেক্যুলারিজমের শুকনো মাটিতে।
যেখানে আল্লাহর আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করার করার কোনো অধিকার নেই। এখানে মানুষের ইচ্ছাই চূড়ান্ত! হোক সে চোর, ডাকাত, সুদখোর, মদখোর, নেশাগ্রস্ত, যিনা- ব্যভিচারকারী!
এ ভূখণ্ডের মুসলমানরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম গণতন্ত্রের পেছনে দৌড়েছে- আর ফিরে এসেছে ফাঁকা হাত নিয়ে, ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে। গণতন্ত্র তাদের মিথ্যে, প্রতিশ্রুতি আর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।


