ভারতের সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদি সরকারের জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দমন করা হয়েছে।
ভারতীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ২০১৬ সালে স্বাধীনতাকামীদের কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পর যে ধরনের বিক্ষোভ হয়েছিল, তেমন কিছু এখন দেখা যাচ্ছে না। এমন কেন হচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে উপত্যকার প্রখ্যাত নেতা এমওয়াই তেরিগামি পাল্টা প্রশ্ন করেন: ‘আপনি কি কখনো তিহার জেলে বিক্ষোভ হওয়ার কথা শুনেছেন?’ কাশ্মীরও এখন জেলখানা।
৫ আগস্ট অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পর থেকে কাশ্মীর ভারতীয় সন্ত্রাসী বাহিনীদের ঘেরাটোপে রয়েছে, যোগাযোগব্যবস্থা স্থবির হয়ে আছে। যোগাযোগব্যবস্থার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ কিছুটা হ্রাস করা হলেও ব্যাপক সন্ত্রাসী মোতায়েন অব্যাহতই আছে।
নয়া দিল্লি আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল দুটি ফ্রন্টে কাজ করার জন্য। একটি হলো স্বাধীনতাকামী নেতা ও পরিচিত সমর্থক ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে আগেই তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়টি হলো, কেবল স্বাধীনতাকামীদের নয়, প্রতিষ্ঠিত দল ও নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোরও সাংগঠনিক সামর্থ্য ভেঙে দেয়া।
সূচনা
৫ আগস্টের অনেক আগেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এবং তা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল অনেক ফ্রন্টে।
এ ধরনের পদক্ষেপের প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২০১৭ সালের মধ্যভাগে। ওই সময় স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অপারেশন অল-আউট শুরু হয়েছিল এবং ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। অপারেশন অল-আউট সফল না হলেও এনআইএ তদন্ত মূল্য দিতে হয়েছিল কথিত স্বাধীনতাকামী ও তাদের সমর্থন ও তহবিল প্রদানের জন্য।
২০১৮ সালের জুনে গভর্নরের শাসন জারির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের জোট সরকারের ওপর থেকে বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে তা করা হয়েছিল। এর ফলে সাবেক এই রাজ্যের ওপর সরাসরি দিল্লির শাসন জারি হয়। ফলে এনআইএ’র কর্তৃত্ব বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ফলে স্বায়ত্তশাসন বাতিলের সময় এনআইএ তার জাল অনেক ছড়িয়ে ফেলেছিল, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার লোকজনকে বৃত্তাবদ্ধ করে ফেলেছিল। স্থানীয় মিডিয়া ছিল বিশেষ টার্গেট। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয় বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয় তাদের মধ্যে বিশেষভাবে ছিলেন স্থানীয় সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার জুনিয়র রিপোর্টাররা ও সম্পাদক মহোদয়। এর ফলে স্থানীয় পত্রিকাগুলো সরকারি নীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হয়।
আগস্টের আগেই নয়া দিল্লি ভারতীয় মালাউন বাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ফেলে। তারপর অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল নিয়ে পার্লামেন্টে যায়। তত দিনে উপত্যকা কমবেশি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগস্টের পর
৫ আগস্ট বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে ৩৭০ বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। সাথে সাথে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কাশ্মীর।
কোনো ফোন ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না। হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়, অনেককে ভারতের নানা স্থানের কারাগারে রাখা হয়। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গৃহবন্দী করা হয়। এদের মধ্যে সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ, তার ছেলে ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিও ছিল।
একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাশ্মীরীরা কেবল অবিশ্বাসের সাথে অমিত শাহের ঘোষণার প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কিছু করার সামর্থ্য তত দিনে শেষ হয়ে গেছে। দৃশ্যপটে কোনো নেতা ছিলেন না, কোনো কার্যকর নেতা বা সামাজিক সংস্থা ছিল না, কিছু করার জন্য। এমনকি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। স্বাধীনতাকামী নেতারা পর্যন্ত তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে কিংবা লোকজনকে প্ররোচিত করতে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছিল না।
কয়েক দিনের মধ্যে পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হতে থাকলেও সেগুলোতে চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে খবর প্রকাশ করা হতো সামান্যই। এমনকি সম্পাদকীয়ও থাকত না। এসবের মতামত অংশে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো প্রাধান্য পেত।
লোকজনের সমাবেশ প্রতিরোধের জন্য রাস্তা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মোড়, প্রবেশপথগুলোতে সন্ত্রাসীবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়। আর সম্ভাব্য উত্তপ্ত এলাকাগুলোতে গণগ্রেফতার চালানো হয়। তরুণরা ছিল বিশেষ টার্গেট।
তবে এসব সত্ত্বেও বিক্ষোভ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। কারো আহ্বান ছাড়াই ধর্মঘট পালিত হয়, গণপরিবহন অনেকটাই বয়কট করা হয়। সরকার নিজেই স্বীকার করেছে, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের তিন শতাধিক ঘটনা ঘটেছে।
সবচে বড় বিক্ষোভটি হয়েছে শ্রীনগরের প্রান্তে আনচরে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার লোক উপস্থিত ছিল।
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
স্বায়ত্তশাসন বাতিলে সাড়ে চার মাস পরও কাশ্মীর এখনো অনিশ্চত অবস্থায় রয়েছে। কিছু কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, রাস্তায় যানবাহনও ফিরছে। কিন্তু এটাকে কি স্বাভাবিক অবস্থা বলা যায়? না যায় না।
কাশ্মীরে এখনো ইন্টারনেট নেই, প্রিপেইড মোবাইল ফোন নেই। নেতাদের এখনো বন্দী করে রাখা হয়েছে। সব ধরনের বিক্ষোভ কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এমনকি নীরব প্রতিবাদও নিষিদ্ধ।
বিশ্বের সবার নজর এখন কাশ্মীরের দিকে থাকায় কোনো গণপ্রতিরোধের ব্যাপারে নয়া দিল্লির রয়েছে নার্ভাসনেস। এ সময় ভারতীয় মালাউন সন্ত্রাসী সরকার স্বাভাবিক রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের কার্যক্রম শুরু করতে দেবে, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।