পাকিস্তানে যাও, মুসলিমদের উদ্দেশে ভারতীয় সন্ত্রাসী পুলিশ

0
882
পাকিস্তানে যাও, মুসলিমদের উদ্দেশে ভারতীয় সন্ত্রাসী পুলিশ

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ ঘিরে উত্তরপ্রদেশের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বলপ্রয়োগেরও অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে। এবার এই রাজ্যে কয়েক দিন আগের বিক্ষোভের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এতে পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা মুসলিম বিক্ষোভকারীদের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের প্রায় ২০ শতাংশ অধিবাসীই মুসলিম। দেশটির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভে প্রায় ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের ১৯ জনেরই প্রাণ গেছে উত্তরপ্রদেশে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং মুসলিমরা। বিক্ষোভের সময় ভাঙচুর ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে ইতোমধ্যে রাজ্যের ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার টুইটারে দেয়া এক বার্তায় যোগী আদিত্যনাথ বলেছে, প্রত্যেক বিক্ষোভকারী অবাক। প্রত্যেক সমস্যা সৃষ্টিকারীরা বিস্মিত। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কঠোরতার কারণে প্রত্যেকে এখন নীরব।

দ্য গ্রেট সিএম যোগী হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই টুইট করা হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। তার এই টুইটের কয়েক ঘন্টা পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বিক্ষোভরত মুসলিমদের উদ্দেশে বলছে, পাকিস্তান চলে যাও।

ভিডিওতে দেখা যাওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মালাউন অখিলেশ নারায়ণ সিং। সে মীরাট জেলায় কর্মরত আছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে এই জেলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৫ জন। ভিডিওতে একদল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, তোমরা পাকিস্তান চলে যাও।

‘তোমরা এখানে খাও কিন্তু অন্য জায়গার গুণগান করো…এই গলি আমার কাছে খুব পরিচিত। আমি আবারও তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, এমনকি আমি তোমাদের নানীর কাছেও পৌঁছাতে পারি। সব বাড়ির প্রত্যেক পুরুষকে গ্রেফতার করা হবে।’

সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকি : মোদি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখা গেছে উত্তরপ্রদেশে। মানবাধিকার কর্মীরা এই সহিংসতার পেছনে দেশটিতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। ভারতে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি; যার ১৪ শতাংশ মুসলিম।

নাগরকিত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের তীব্রতা উত্তরপ্রদেশে গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এখনও ঝটিকা বিক্ষোভ-মিছিল অব্যাহত আছে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে যোগী আদিত্যনাথের সরকার জানায়, তারা ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীর কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন রুপি জরিমানা আদায় করছে।

বিক্ষোভের সময় সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও ধ্বংসের দায়ে এই জরিমানা আদায় করা হবে। এমনকি বিক্ষোভকারীরা যদি এই ক্ষতিপূরণ না দেয়, তাহলে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকিও দিয়েছে যোগীর প্রশাসন।

বিক্ষোভ দমনে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং গণ-গ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। ১১ ডিসেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে এক হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা দেশটির বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৪ সালে দেশটিতে ক্ষমতায় আসার পর এমন তীব্র বিক্ষোভ এবং বিরোধিতার মুখে প্রথমবারের মতো পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।

বিতর্কিত এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

সূত্র : আলজাজিরা, রয়টার্স

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুর্কিনা-ফাসোতে আল-কায়েদা যোদ্ধাদের হামলা, নিহত ১৮ মুরতাদ সেনা।
পরবর্তী নিবন্ধসন্ত্রাসী রাশিয়া ও আসাদ বাহিনীর হামলায় দুই সপ্তাহেই বস্তুচ্যুত হয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার সিরিয়ান!