আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে নতুন একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে যার শিরোনাম, “সোমালিয়ার জিহাদের সিংহদের প্রতি শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা এবং “আল-কুদুস কখনোই ইহুদীদের হবেনা” (القدس لن تهوّد) নামক ধারাবাহিক অপারেশনে তাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
বিবৃতিটি আরবী ও ইংরেজি উভয় ভাষায় প্রকাশিত হয় এবং তাতে হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদীনের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
বিবৃতিটির শুরুতে বলা হয়,“সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর সৈন্যদের হাতকে মজবুত করেছেন এবং তিনি একাই শত্রু বাহিনীর ভিত্তিকে ধ্বংস করেছেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর — যিনি তাঁর উম্মতকে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন, শহীদ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন গৌরবময় পথে, আর তাঁর পরিবার ও সহযোগীদের উপর।
অতঃপর, আমরা হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের নেতৃত্বে থাকা সম্মানিত উমারাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি শাইখ আবু উবাইদাহ আহমাদ ওমার (হাফিজাহুল্লাহ্) এবং তাঁর ভাইদের প্রতি, যাঁরা উম্মাহর সন্তানদের হৃদয়ে ত্যাগের চেতনা প্রজ্বলিত করেছেন এবং কাফেরদেরকে বিতাড়িত করার মহান শিক্ষা দিয়েছেন; যাঁরা “আল-কুদুস কখনোই ইহুদীদের হবে না” অপারেশন সিরিজের ধারাবাহিকতায় কাফেরদের সামরিক ঘাঁটি ও তাদের কৌশলগত কেন্দ্রগুলোতে তীব্র আঘাত হেনেছেন।
এই অপারেশন সিরিজের সূচনা করেছিলেন সোমালিয়ার মুজাহিদগণ। এরপর তাঁদের ভাইয়েরা মালি, নাইরোবি, আজলহক এবং বালাদ্বাইক্লিতে তাঁদের অনুসরণ করেন।
আর সর্বশেষ তাঁদের ভাইয়েরা ১৪৪১ হিজরির গত ১০ই জুমাদিউল-আওয়াল ‘মান্দা-বে’তে উক্ত অপারেশনের ধারাবাহিকতায় সফল এক অভিযান পরিচালনা করেছেন। ঐখানে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদীন এর বীরেরা লামু প্রদেশের (মান্দা) উপসাগরে ক্রুসেডার মার্কিন নৌবাহিনীর (সিম্বা) সামরিক নৌ-ঘাঁটি পুড়িয়ে দিয়েছেন, কয়েক ডজন ক্রুসেডার আমেরিকান কাফেরকে হতাহত করেছেন এবং ক্রুসেডারদের অনেক সামরিকযান, গাড়ি ও বিমান ধ্বংস করেছেন। মুজাহিদগণের এই অভিযান এতোটাই দুর্দান্ত ছিল আর ইসতেশহাদী হামলাগুলো এতই চমৎকার ছিল, জিহ্বা বা কলমের ভাষায় যা বর্ণনা করা সম্ভব নয়।”
বিবৃতিতে ‘উম্মাতে ইসলামিয়ার জন্য আল-কুদুসের গুরুত্ব’ শিরোনামে বলা হয়েছে, “হে উম্মাতে ইসলামিয়া! নিশ্চয়ই জেরুজালেম এখন ইসরাঈলের ঘাঁটি, অথচ এটা ছিল মুহাম্মাদ (صلى الله عليه وسلم) এর অবতরণস্থল। আজ কাফেররা আমাদের পবিত্র স্থানকে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেছে।
হে মুমিনগণ! এটা হল সমসাময়িক জায়নিস্ট ক্রুসেড।
যতক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলার জন্য স্বতন্ত্রভাবে বড় ধরণের জিহাদী অপারেশন সম্পাদন করা না হবে, ততক্ষণ ক্রুসেডারদের অগ্রযাত্রা থামবে না। সুতরাং ক্রুসেডারদের মাথায় আঘাত করুন এবং তাদের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করুন।
আমরা এক জাতি, আমাদের প্রভু এক, কাবা এক, পথ পদর্শনকারী কিতাব এক, আমাদের কালিমা এক, আমাদের শত্রুও এক, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সাথে ক্রুসেডারদের শত্রুতা পুরাতন এবং এর কোন শেষ নেই, তা কিয়ামতের উত্থান পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
আজ পঙ্গপালের মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্রুসেডাররা। তারা আমাদের জাতিকে টার্গেট করে করে হামলা করছে। তাই আসুন আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে একাধিক ঘাঁটি এবং মোর্চায় এই জায়নবাদী ক্রুসেডার শত্রুর সামনে দাঁড়াই। তারা যেমন আমাদের জাতিকে টার্গেট করছে, তেমনি এখন মু’মিনদের জন্যও আবশ্যক হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্রুসেডারদের উপর আঘাত হানা।
যেহেতু, মুসলিমরা একটি দেহের মতো; যদি তার এক হাত আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তবে তার দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলোও কষ্ট পায়।”
এরপর জামাআত কায়েদাতুল জিহাদ এর ঐ কেন্দ্রীয় বার্তায় সম্মানিত আলেম সমাজের উদ্দেশ্যে বলা হয়, “হে বিশ্বের সর্বস্থানের মুসলিম আলেমগণ, এই পবিত্র যুদ্ধে আপনাদের সঠিক অবস্থান হচ্ছে আপনারা জিহাদে গভীরভাবে নিমিগ্ন হবেন। এর গতিপথকে নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালিত করবেন। জিহাদ ও আমলের ভাষায় আপনাদের ইলম ও ঈমানকে ব্যাখ্যা করবেন। উম্মতের অন্তরে ইসলামী মানসিকতা ও অনুভূতি জাগিয়ে তুলবেন।
আপনারা যাতে আশ্বস্ত হতে পারেন, আপনাদের মুজাহিদ সন্তানরা কেবল এই মুসলিম উম্মাহর অগ্রভাগেই রয়েছে। যারা আপনাদের অবিচলতা ও প্রত্যাবর্তনের প্রহর গুণছে, যাতে তারা জ্বলন্ত অঙ্গার থেকে অধিক উষ্ণতার পরিস্থিতিতেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে।
কারণ, আপনাদের মাধ্যমেই এই পথচলা দৃঢ়তা পাবে। ভারসাম্যতা, হিকমাহ ও ন্যায়ের বুঝগুলো গভীরতায় পৌঁছাবে। তাই আপনারা জাগ্রত হোন এবং ইসলামের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র সমূহে দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ করুন।
“আল-কুদুস কখনই ইয়াহুদীদের হবে না” এই আক্রমণের ধারাবাহিকতায় ‘মান্দা বে’ যুদ্ধের ব্যাপারে প্রকাশিত বার্তায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি বলা হয়েছে- “হে আমাদের ফিলিস্তিনী ভাইয়েরা, প্রত্যেক দৃষ্টিমানের কাছে রাস্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আপনাদেরকে কেবল ইয়াহুদিরাই আপনাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি এবং বের করার ব্যাপারে সাহায্য করেনি, বরং এই কাজে ইয়াহুদীদের দোসর ও মুরতাদরাও অংশ নিয়েছে।
নিশ্চয়ই আমাদের কুদুসকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও কুদুস, আমাদের ঘর সমূহকে ফিরিয়ে আনা যা আপনাদেরও ঘর— শুধু একটি আন্দোলন অথবা একটা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। বরং এর জন্য আবশ্যক এক উম্মাহর মানসিকতা জাগিয়ে তোলা এবং তা প্রতিষ্ঠা করা। যাতে পুরো উম্মাহ তার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘাঁটিতে যুদ্ধ করতে পারে। প্রত্যেক দেশে ক্রুসেডারদের উপর আক্রমণ করতে পারে। হে আমাদের ভাইয়েরা, আমরা আপনাদের সাহায্যকারী। তাই আপনারাও আমাদের সাহায্যকারী হয়ে যান। আমরা আপনাদের সাথে একত্রিত হয়েছি একটি ফরজকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুতরাং আপনারা কোনো নফল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবেন না। আমরা ও আপনারা ইসলামকে উঁচু করতে চাই। সুতরাং আমরা সেই হাতগুলোকে ভেঙ্গে দিবো যা ইসলামকে নিচু করতে চায়।
গুনাহের মাধ্যমে দুর্বল কিন্তু রবের সাহায্যে শক্তিশালী কায়েদাতুল জিহাদের ভাইয়েরা আপনাদের ক্ষতস্থানের প্রবাহিত রক্ত নিজ হাতে স্পর্শ করে শপথ করছে, সম্মানিত স্থানগুলোকে ফিরিয়ে আনা এবং আল্লাহ তাআলার শরিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত কষ্ট ও বিপদ মাথা পেতে মেনে নিবে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যাতে তিনি আমাদেরকে আপনাদের পবিত্র স্থান, সম্মান, দ্বীন ও আপনাদের জান-মাল রক্ষার জন্য উৎসর্গ করেন।”
এরপর বার্তাটিতে মিডিয়ার নিকৃষ্ট ধোঁকাবাজির ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “আর এই মোবারক যুদ্ধ ও তার উদ্দেশ্য গুলোর ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না করার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত মিডিয়াগুলোর —বিশেষ করে আল-জাজিরা চ্যানেল ও তার মত চ্যানেলগুলোর— আমেরিকা ও ইহুদিদের দালালি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এসকল মিডিয়াগুলো জিহাদ এবং মুজাহিদদের ব্যাপারে তাদের শত্রুতা স্পষ্ট করেছে, কেমন যেন এগুলো আমেরিকা এবং তার দেয়া শিক্ষার গোলাম হয়ে গেছে। আমরা মুসলিম উম্মাহকে ওয়াদা করছি, এই আল-জাজিরা চ্যানেল ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত বিশেষ করে মুজাহিদ ও জিহাদের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্তের ব্যাপারে ধারাবাহিক ভিডিও প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।”
এরপর বার্তা শেষ করা হয়েছে এই কথা বলে, “আমাদের সর্বশেষ বার্তা হচ্ছে ক্রুসেডার আমেরিকা ও ইয়াহুদী ইসরায়েলের প্রতি এবং অন্য সমস্ত ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলোর প্রতি। আমরা আল্লাহ তায়ালার নামে শপথ করছি, নিশ্চয়ই আমাদের বিরুদ্ধে তোমাদের যুদ্ধ বা আক্রমণ কখনোই এই জিহাদের ধারাবাহিকতা থেকে আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না, যতক্ষণ না আমরা বিজয় অথবা শাহাদাত লাভে ধন্য হই। আমরা ইমাম উসামা রহিমাহুল্লাহর কসমের ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যা আল্লাহর প্রশংসায় সত্যে পরিণত হয়েছে। সামনের ভবিষ্যৎ অবশ্যই তোমাদের উপর অনেক কঠিন ও কষ্টদায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। আর নিশ্চিত থাক, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ তায়ালার শক্তি ও সাহায্যে তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারে বাধ্য করব। নিশ্চয়ই যে সতর্ক হবে সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। আমাদের উপর স্পষ্ট পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই। সুতরাং অপেক্ষা করো হে ক্রুসেডাররা, নিশ্চয়ই আমরাও অপেক্ষায় আছি।
অনুবাদক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ