সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে উগ্র সন্ত্রাসী হিন্দুত্ববাদী কর্তৃক মুসলমানদের ওপর চালানো সহিংসতায় দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী নিহতে সংখ্যা ৫৩ জন। সহিংসতা চলাকালীন নিহতের সংখ্যা ৪০ জন থাকলেও পরে নর্দমা থেকে এবং রাইসমিলের ছাই-এর নিচ থেকে অনেক লাশ উদ্ধার হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে ৫৩ তে দাঁড়িয়েছে। খুন করে লাশ গোপন করে রেখে দেওয়ায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। অনেকে আশঙ্কা করছেন নিহতের সংখ্যা শ ছাড়িয়ে গেছে।
খুন করা ছাড়াও স্থানীয় মুসলমানদের ঘরবাড়ি এবং দোকানপাঠে ব্যাপক লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। লুঠপাট এবং সহিংসতার তীব্রতা হামলা চলাকালীন আত্মরক্ষার জন্য হিন্দুদের বাড়িতে গেরুয়া পতাকা ঝুলানোর ঘটনা থেকেই আন্দায করা যায়।
ভারতে দাঙ্গার নামে মুসলমান হত্যা নতুন কিছু নয়। এই শতকের গোড়ার দিকেই দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কসাই নরেন্দ্র মোদির গুজরাটে তারই মদদে ভয়াবহ মুসলিম নিধন করা হয়েছিল। সেবার ২ হাজারের অধিক মুসলমানকে কুপিয়ে, পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এর আগেও ৪৭ এ দেশভাগ পরবর্তী সময়ে এবং অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর টার্গেট করে করে মুসলমান মারা হয়েছিল। পরে হত্যাকাণ্ড বৈধতার জন্য একটি সুন্দর শব্দবন্ধ যোগ করে দেওয়া হয়েছিল ঘটনাগুলোর শুরুতে- সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
পরিসংখ্যানের বিচারে গুজরাটের গণহত্যা এবং দেশভাগ পরবর্তী গণহত্যাকে ভয়াবহ এবং সে তুলনায় দিল্লির সাম্প্রতিক সহিংসতাকে নগন্য মনে করা হলেও বাস্তবতার বিচারে দিল্লি হত্যাকাণ্ড নগন্য কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপট অন্তত সে কথা বলে না। সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তারা বরং বেঁচে গেছেন কিন্তু যাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে জমি দখল করা হয়েছে তাদের শুরু হয়েছে অনন্তের দুর্ভোগ। আক্ষরিক অর্থে তাদের অনেকে এখন ভারতের নাগরিক নন। ঘরবাড়ি হারিয়ে তাদের শুরু হল এখন অনিশ্চয়তার জীবন। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে কিংবা ঠেলে দেওয়া হবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে।
সবচেয়ে ভয়াবহ হল, দিল্লি হত্যাকাণ্ড গোটা ভারতের সকল মুসলমানের মনোবলের জন্য চরম আঘাত স্বরূপ। এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ’র গ্যাড়াকলে ফেলে মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বিতাড়নের যে মেন্টাল গেইম, দিল্লির সহিংসতা তার শরীরি ভাষা। বিজ্ঞজনেরা আশঙ্কা করছেন, দিল্লির ঘটনার পুনরাবৃত্তির ভারতের রাজ্যে রাজ্যে হবে।
সিএএ বিরোধী শাহিনবাহের তুমুল আন্দোলন বানচাল করতে দিল্লিতে চালানো এ গণহত্যা এ অগ্রিম সতর্কবার্তা সমস্ত রাজ্যের মুসলমানদেরকে দিয়ে রেখেছে যে, চুপ থাকো, নিরব থাকো- নতুবা দিল্লি থেকে পরিণতি ভিন্ন হবে না।
সুতরাং দিল্লির ঘটনাকে মুসলমানদের গৃহহীন, ভূমিহীন এবং দেশহীন করার গভীর ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত আক্রমণের প্রথম প্রকাশ বলা যেতে পারে।