ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর পাশ্ববর্তী নুহ জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিরা।
এই জেলাটির অবস্থান রাজধানী থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানা প্রদেশে। কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য এটা রেড জোন হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় কোন স্বেচ্ছাসেবক দল সেখানে প্রয়োজনীয় খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে পারছে না। নুহের মতো আরও ১০৭টি জায়গাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে সরকার।
যদিও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এখন পর্যন্ত কোন আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যায়নি। এই ক্যাম্পে মোটা ২৫০ পরিবার বাস করছে। তবে এর আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে এ পর্যন্ত ৪৮জন ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দা জাফরুল্লাহ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, সে এবং আরও কয়েকজন মিলে কমিউনিটির বাসিন্দাদের জন্য দরকারি জিনিসপত্র কিনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, কিন্তু লকডাউনের কারণে তারা কিছু করতে পারছে না। সে উদ্বেগ জানিয়ে বললো, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে হবে না, এখানকার মানুষ হয়তো ক্ষুধাতেই মারা যাবে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার সব রাজ্যগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে যাতে ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরীক্ষা করা হয়।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী বিগত এক দশকে প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়ে আছে। জাতিসংঘের এই সংস্থা যদিও ১৭,৫০০ শরণার্থীকে কার্ড দিয়েছে, কিন্তু ভারত এই কার্ডের স্বীকৃতি দেয় না, কারণ তারা জাতিসংঘের শরণার্থী সনদে স্বাক্ষর করেনি।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি মালাউনদের বিদ্বেষের কারণ হল,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের পরীক্ষা করাটা জরুরি হয়ে গেছে কারণ দেখা গেছে যে, তাদের অনেকে তাবলীগ জামাতের ইজতেমায় যোগ দিয়েছিলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, “হায়দ্রাবাদের ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দা রোহিঙ্গারা হরিয়ানায় তাবলিগের ইজতেমায় যোগ দিয়েছিলো এবং জাতীয় রাজধানীর নিজামুদ্দিনের ইজতেমাতেও তাদের অনেকে অংশ নিয়েছিলো”।
৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বর্ধিত করার কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। এই শরণার্থীরা মূলত অন্যের দান এবং এনজিওগুলোর সহায়তার উপর নির্ভর করে টিকে আছে।
জাফরুল্লাহ ফোনে বলেন, “২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন প্রথমবার লকডাউন ঘোষণা করলেন, তখনও আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু কোনরকমে আমরা সেই সময়ের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু নুহ জেলাকে রেড জোন ঘোষণা করার পর আমাদের সমস্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। আমরা বাইরে গিয়ে খাবার বা ওষুধ কিনতে গেলে পুলিশ আমাদেরকে পেটায়, এবং সে কারণে আমাদের মধ্যে এখন ক্ষুধার্ত হয়ে মরে যাওয়ার ভয় ঢুকে গেছে”।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি