ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাগা বিদ্রোহ নতুন মোড় নিয়েছে। অতিসম্প্রতি নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠী এনএসসিএন এর ছয় ব্যক্তিকে হত্যার প্রেক্ষিতে ডিমাপুরে অনুষ্ঠিতব্য একটি শান্তি আলোচনার বৈঠক বাতিল করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এনএসসিএন এর নেতা মুইভা গোট। হয়তোবা এই সূত্র ধরেই তৈরি হবে নাগা বিদ্রোহের নয়া প্রেক্ষাপট। আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন আল্লাহ তার শত্রুদের পরস্পরের মাঝে আরও বিরোধ তৈরি করে দেন। আমিন।
এনএসসিএন কারা?
এনএসসিএন (ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউঞ্চিল অফ নাগাল্যান্ড) হচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। আদর্শিকভাবে তারা হচ্ছে মাওবাদী, নাগা জাতিয়তাবাদী ও বামপন্থী খ্রিস্টান। তাদের কার্যক্রম ভারতের মনিপুর, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ ও মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে বিস্তৃত। নাগাল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে থুইঙ্গালেং মুইভা ওরফে মুইভা গোট, আইজ্যাক সু আর এসএস খাপলাং-য়ের নেতৃত্ব এনএসসিএন গঠিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে, যদিও নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরেও অনেক পুরনো। পরে ১৯৮৮ সালে মি খাপলাংয়ের নেতৃত্বে এসএসসিএন ভেঙে দু`টুকরো হলেও মূল সংগঠনের রাশ ছিল অইজ্যাক-মুইভা গোষ্ঠীর হাতেই।
বহু বছর ধরে তারা বিদেশে নাগাল্যান্ডের একটি নির্বাসিত সরকারও চালিয়ে আসছিল। তবে ১৯৯৭ সালে ভারত সরকারের সঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে শান্তি-আলোচনা শুরু করে।
নাগা শান্তিচুক্তি ৩ অগাস্ট ২০১৫
দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রক্রিয়ার পর ৩ অগাস্ট ২০১৫ ইংরেজি, সোমবার সন্ধ্যা ৬:৩০-এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনেই ভারত এই চুক্তি সই করেছে। অনুষ্ঠানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল-সহ সরকারের বহু মন্ত্রী যেমন ছিল, তেমনি ছিল নাগা নেতারাও।
শান্তিচুক্তির মাঝে ফাটল শুরু হল!
শান্তিচুক্তি সইয়ের পূর্ব শর্ত হিসেবে দুটি দাবি জানিয়েছিল এনএসসিএন-আইএম। এ দুটি হচ্ছে নাগাল্যান্ডের জন্য আলাদা পতাকা এবং পৃথক নাগা সংবিধান বা ইয়েজাবো। কিন্তু পরে মোদি সরকার তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করায় পুরো প্রক্রিয়াটিই এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এনএসসিএন-আইএম ও ভারত সরকারের মধ্যে ২০১৫ সালে ফ্রেমওয়াক এগ্রিমেন্ট সই হওয়ার পর অনেক দিন হয়ে গেল কিন্তু চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সাক্ষাত পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, নাগা বিদ্রোহ হলো এই অঞ্চলের সব বিদ্রোহের জননী। ফলে তাদের সাথে শান্তিচুক্তি হলো এখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অপরদিকে ভারত সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছে, একটি সার্বভৌম জাতির অধীনে দুটি সংবিধান ও দুটি জাতীয় পতাকা থাকতে পারে না। অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিলের মাধ্যমে আমরা জম্মু ও কাশ্মিরের আলাদা জাতীয় পতাকা থেকে সবেমাত্র মুক্ত হয়েছি। ফলে আমরা আর এটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।
একদিকে নাগাদের আলাদা পতাকা ও সংবিধানের দাবী, অপরদিকে ভারতের অস্বীকৃতি-এর ফলে নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ভারতের মধ্যে বিবাদ চরমে উঠেছে, সম্ভবত এর ফলশ্রুতিতেই ১১ জুলাই এনএসসিএনের ৬ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ভারত।
উল্লেখ্য মুইভা চীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ গেরিলা নেতা। মুইভা মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট। ভোলা উচিত নয় যে চীনে ‘রাজনৈতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ এই ব্যক্তি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সর্বোচ্চ সময়ে চীনে ছিলেন এবং ২৩ বছর ধরে দিল্লির সাথে আলোচনার সময় তার দক্ষতা শানিত করেছে।
৬ বিদ্রোহী হত্যা ও বর্তমান অবস্থা!
গত ১১ জুলাই ২০২০ ইংরেজি ভারতের অরুণাচল প্রদেশের লংডিং জেলার জিনু-তে ইন্ডিয়ান আর্মি, আসাম রাইফেলস, অরুণাচল পুলিশের যৌথ অপারেশনে এনএসসিএনের ৬জন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা হয়। এরপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা মুইভা গোট ভারত সরকার তাদেরকে বারবার যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে মন্তব্য করে। প্রতিশোধ স্বরূপ সর্বশেষ ডিমাপুরে ভারতের প্রতিনিধি আরএন রবির সাথে অনুষ্ঠিতব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাতিল করেছে মুইভা গোট।
শেষ কথা
পুরো আলোচনার একটি উদ্দেশ্য হল পাঠকবর্গকে নাগাল্যান্ড ও নাগা বিদ্রোহের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা প্রদান করা। বামপন্থী নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মুশরিক ইন্ডিয়ান আর্মি- দুটাই মুসলিমদের শত্রু। আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া করি, এরা পরস্পর যেন যুদ্ধে লেগে থাকে এবং তাদের শক্তিকে নিঃশেষ করতে থাকে। দিন শেষে আল্লাহ চাইলে এদের এই শক্তিক্ষয় মুমিনদের প্রশান্তির কারণ হবে ইনশা আল্লাহ।
সূত্র:
১- অসমীয়া প্রতিদিন
২- বিবিসি বাংলা
৩- দ্যা ইকোনমিক টাইমস
৪- উইকিপিডিয়া
লেখক: মুস্তাফা আবদুল হামিদ