গতকাল সকাল সোয়া ১০টা। অ্যাম্বুলেন্সে মানিকগঞ্জ থেকে মাসুদ রানা (৩২) নামের পঙ্গু এক রোগী এসে দাঁড়ালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। স্বজনরা ছুটে গেলেন ভিতরে স্ট্রেচার আনতে। স্ট্রেচার পেতে প্রায় ৮ মিনিট দেরি হলো।
এরপর রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলো ইমারজেন্সিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসক ও নার্স চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেন। মাসুদ রানার বড় ভাই মাকসুদ কামাল বলেন, এর আগে রাজধানীর দুটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেও সুযোগ হয়নি। ফলে তারা ঢাকা মেডিকেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। পিরোজপুর ইন্দুরকানি (জিয়ানগর) উপজেলা থেকে ফুটবল খেলায় আহত হয়ে সুমন এসেছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে। কিন্তু ইমারজেন্সিতে কোনো চিকিৎসক না পেয়ে সপরিবারে আবারও ফিরে যান নিজ এলাকায়। যাওয়ার সময় তার স্বজনরা জানান, সেবা পাওয়া তো দূরের কথা, জরুরি বিভাগে চিকিৎসক-নার্স কেউই নেই।
শুধু এই দুজনই নয়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন ভিড় বাড়ছে। করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য রোগীরাও এখন হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। কিন্তু মিলছে না সেবা। করোনা রোগীদের মতো সাধারণ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও নানা দুর্ভোগে পড়ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্য রোগের চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া দায়। করোনা রোগীরাও হাসপাতালে পদে পদে দুর্ভোগে পড়ছেন। যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের খোঁজ পর্যন্ত নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। জানা গেছে, কভিড-নন-কভিড বা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা। এর ফলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়েছে
বিশেষত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পক্ষাঘাত, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, লিভার, কিডনি, দাঁত ও চোখ নিয়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগব্যাধিতে ভুগছেন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়েছে। গর্ভবতী নারী, প্রসূতি ও শিশুদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিটা বেশি। এসব রোগীর অনেকেই হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসক না থাকায় ফিরে আসছেন। করোনা আক্রান্ত অনেক রোগী এখন বাসায় থেকে টেলিমেডিসিন নিচ্ছেন। রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ফল জানিয়ে ফোনে বার্তা আসে। এরপর নিজে থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধ খেয়েছেন তিনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য, মানুষকে সেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। এমন যদি হয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না। রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না। এমনকি গর্ভবতী মায়েদের প্রসব বেদনা ওঠার পর হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো চরম অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। এটাকে চিকিৎসাসেবা বলে না। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বৃদ্ধ এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়। কিন্তু তিন-চারটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও তাকে ভর্তি করানো যায়নি। একপর্যায়ে প্রভাবশালী মহলের রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে তাকে সরকারি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভুক্তভোগী বৃদ্ধার নাতনি জুয়েল হায়দার জানান, করোনার এই সময়ে নিশ্চয়ই সবাই করোনা রোগী নয়। কিন্তু যে হাসপাতালেই তারা গেছেন, সাফ বলে দিয়েছে চিকিৎসা হবে না। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালগুলোয় এ ধরনের রোগী এলেই টালবাহানা শুরু করছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিডি প্রতিদিন