প্রকল্পের কাজ কমানোর পরও ব্যয় বাড়ে। আবার সেই ব্যয় বৃদ্ধিটাও অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। যে কাজ ২০১৯ সালের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা সেই সময়ে তো শেষ করতেই পারেনি, সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনেও ব্যর্থ হয়েছে। ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ঢিমেতালে কাজ চালিয়ে নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করতে না পেরে এখন দায় চাপাচ্ছে করোনাভাইরাসের ওপর। সেই অজুহাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রকল্পটির মেয়াদ আবারো এক বছর বাড়ানোর আবদার করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২৭৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের অধীনে কার্যক্রমগুলো হলো, উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬টি পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়ন, ৭৩টি পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন ও নির্মাণ, চারটি কবর স্থানের উন্নয়ন, ৪টি কসাইখানা নির্মাণ ও উন্নয়ন, ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন এবং পার্কে বিভিন্ন ধরনের রাইড স্থাপন। কিন্তু বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি, পরামর্শক নিয়োগ, পার্কের ডিজাইন চূড়ান্ত করা, বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ ইত্যাদির করণে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত ও বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি। এখন অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ২৬টি পার্কের মধ্যে বারিধারা পার্কটি বারিধারা সোসাইটি কর্তৃক উন্নয়ন বা ব্যবস্থাপনা করায়, ফার্মগেট আনোয়ারা উদ্যান মেট্রোরেল প্রকল্পের স্টেকইয়ার্ড স্থাপনের কারণে, ফার্মগেট ত্রিকোণ মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে এবং মিরপুর গুদারাঘাট পার্কটির মারিকানা নিয়ে জটিলতা থাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চারটি পার্ক এর উন্নয়ন কার্যক্রম বাদ দিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব নগর উন্নয়নের অভিমত হলো, প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে কসাইখানা, কবরস্থান এবং পার্ক ও খেলার মাঠের সংখ্যা কমানোর পরও অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শক ও কাজের খরচ বাড়ানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ভালোভাবে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।
কমিশন বলছে, প্রকল্পের বিভিন্ন খাত বাস্তবায়ন না করায় প্রায় ৫২ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু অন্য দিকে, প্রকল্পে প্রতিটি কবর স্থানের উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রতিটি কসাইখানা উন্নয়নে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, পার্ক খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্দির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধিতে ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ব্যয় বাড়ানো যুক্তিযুক্ত নয়। নয়া দিগন্ত