বাপেক্সে সমস্যা না থাকলেও উচ্চব্যয়ে কাজ পাচ্ছে রাশিয়ান গ্যাজপ্রম

0
702
বাপেক্সে সমস্যা না থাকলেও উচ্চব্যয়ে কাজ পাচ্ছে রাশিয়ান গ্যাজপ্রম

দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয়ে বাপেক্সের তিনটি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি পাচ্ছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। বাপেক্সের প্রতিটি কূপ খনন করতে যেখানে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৮০ কোটি টাকা, সেখানে গ্যাজপ্রমকে দেয়া হবে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১৮০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে)।

অর্থাৎ তিনটি কূপ খনন করতে যেখানে বাপেক্সের ব্যয় হতো ২৪০ কোটি টাকা, সেখানে গ্যাজপ্রমকে দেয়া হবে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, বা ৫৪০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এই কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি সচিবের নেতৃত্বাধীন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি)।

এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সেখানকার অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পিপিসির সিদ্ধান্তের পর উচ্চপর্যায়ের এই অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

কূপ তিনটি হচ্ছে- শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান কূপ টবগি-১ এবং ভোলা নর্থের অনুসন্ধান কূপ ইলিশা-১ ও উন্নয়ন কূপ ভোলা নর্থ-২।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকা দ্বীপজেলা ভোলা। এখানকার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। ভোলা নর্থ নামে এখানে আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিক রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সাশ্রয়ী ও সফল বলে স্বীকৃত। এরপরও বাপেক্সের ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি কূপ খননের কাজ বেশি ব্যয়ে দেয়া হচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে।

বাপেক্সের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেয়া হচ্ছে সেগুলোও বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে দেয়া। অর্থাৎ বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেয়া স্থানেই (লোকেশন) গ্যাজপ্রম খনন করবে।

তা ছাড়া, বাপেক্স ওই সব এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তাদের কাছে রয়েছে। কূপ খননের জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলও বাপেক্সের আছে। এর একেকটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ১ কোটি ডলার বা ৮৫ কোটি টাকা। (রিগ ভাড়া, জনবলের পিছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাগুলোর ব্যয় প্রভৃতিসহ)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বের জ্বালানি খাতে গ্যাজপ্রমের অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এ কোম্পানি বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে। এতে মানসম্মত কাজ হয় না বলে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গত ১০ বছরে গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মিলিয়ে ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে ভোলার দু’টি কূপ রয়েছে। কূপপ্রতি রাশিয়ার কোম্পানিটি গড়ে ১৫২ কোটি টাকা করে নিয়েছে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে। যেখানে বাপেক্স নিজে কূপ খননে ব্যয় করে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা।

ভোলার গ্যাসক্ষেত্র বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূকাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্যসব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূতাত্ত্বিক নাম ‘অ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে। গ্যাসের মজুদ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০০৯ সালের ১১ মে থেকে শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলায় দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গ্যাজপ্রম গত বছরের ২৫ মে ভোলার ওই তিনটি (টবগি-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২) খননের জন্য ৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দর প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কারিগরি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই উপ-কমিটি কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষি শেষে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দর চূড়ান্ত করে তা পিপিসির কাছে উপস্থাপন করে। গত ২৭ আগস্ট জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিপিসির সভায় এই দাম সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই সূত্র আরো জানায়, এই কূপ তিনটি খননে অস্বাভাবিক ব্যয়ের যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে ভোলা ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেসার) বেশি, ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই থাকায় সেখানে কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টরসহ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করতে হবে। কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতির কারণে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালামাল ও জনবল আনা- নেয়ার ব্যয়ও বাড়বে।

তবে ওই সূত্র জানিয়েছে, কূপ তিনটি বাপেক্স খনন করলেও ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সেবাগুলো তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করতে হয়। আর এই কাজের জন্য বিদেশ থেকে হাজার হাজার টন মালামাল আনা কিংবা শত শত লোক আনা-নেয়ারও কোনো বিষয় নেই যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় বেড়ে যাবে। নয়া দিগন্ত

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার গুলি করে তুলে নিয়ে গেল সীমান্ত সন্ত্রাসী বিএসএফ
পরবর্তী নিবন্ধ৪ দশকের মধ্যে বড় অর্থসঙ্কটে ভারত