পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্যের পুনরাবৃত্তি হলো। গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবরে রাতারাতি যেভাবে দাম চড়ে গিয়েছিল, এবারও তাই হলো। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শতক পার করেছে পেঁয়াজের কেজি। সোমবার ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কথা জানায়। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে গতকাল পর্যন্ত খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা পার হয়ে গেছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বাড়িয়ে খুচরা বিক্রেতারা ৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বৃদ্ধির পাইকারি ও খুচরা সব বাজারেই রয়েছে। এর পেছনে একমাত্র কারণ হলো ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৮০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত টনপ্রতি পেঁয়াজের দাম ন্যূনতম ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধ করে। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে তিন শ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ২৫ লাখ টনের বেশি উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য, প্রায় ২৫ শতাংশ পচে যায়। সেই হিসাবে পেঁয়াজের প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ টনের বেশি।
বাংলাদেশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ৫৯ লাখ মেট্রিক টন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১০ দশমিক ৯১ লাখ টন। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আমদানি হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার টন।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম অস্থির। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি বুঝি বাজারের সব পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাবে। তাই দামেও বারবার পরিবর্তন আসছিল। নতুন কেউ এসে বিক্রেতাদের কাছে দাম জানতে চাইলেই কেজিতে ৫-১০ টাকা বেশি চাইছেন। দুপুর ১২টায় বাজারে ঢুকে দেশি পেঁয়াজ ৪০০ টাকা পাল্লা (৮০ টাকা কেজি) দেখা গেল। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকায় (৯০ টাকা কেজি) বিক্রি শুরু করলেন বিক্রেতারা। ২.৩০টায় বের হওয়ার সময় এক বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে ৫০০ টাকা পাল্লা (১০০ টাকা কেজি) দাম চাইলেন। একই অবস্থা আমদানি করা পেঁয়াজের দামেও। বিকেল পর্যন্ত কারওয়ান বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ওঠে ৩০০ টাকা পাল্লা বা ৬০ টাকা কেজি।
টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮১ শতাংশ।
পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যে গতকাল রাজধানীর ঢালি বাজার থেকে আলম নামের এক ক্রেতাকে দুই ব্যাগে মোট ১৫ কেজি পেঁয়াজ নিয়ে বাসায় ফিরতে দেখা গেল। আলম বলেন, ‘গত বছরও সরকার বলেছিল মজুদ পর্যাপ্ত। কিন্তু তার পরও দাম বেড়ে ২৫০ টাকায় উঠেছিল। তাই এবার আর ভুল করব না।’
ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি : রাজধানী ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়ও পেঁয়াজের বাজার চড়া। দেশি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাটসহ বিভিন্ন বাজারে ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ এক দিনে এক লাফে ১০০ টাকা হয়ে গেছে।
আমাদের নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা, বেনাপোল (যশোর), ভালুকা (ময়মনসিংহ) ও গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি এসব তথ্য জানিয়েছেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, দুই দিন ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। কালের কন্ঠ