পাকিস্তানীদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনায় প্রসিদ্ধ ও বিশিষ্ট পাকিস্তানী সাংবাদিক হামিদ মীর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তোপের মুখে জনপ্রিয় নিউজ অনুষ্ঠানের শো পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরাকে সাংবাদিক হামিদ মীর নিশ্চিত করেছেন যে, গত ৩১ মে সোমবার সন্ধ্যা থেকে জিও নিউজের জনপ্রিয় “ক্যাপিটাল টক” অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় আর থাকছেন না তিনি।
হামিদ জানান,”আমি জিও নিউজের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, আমি আর নিউজ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করবো না।”
হামিদের নিউজ উপস্থাপনা থেকে সরে দাড়ানোর বিষয়ে জিও নিউজের পরিচালনা পরিষদ আল জাজিরাকে জানায়, হামিদ মীর আর অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন না।
বিশ্বস্ত সূত্র আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে, সাংবাদিক হামিদকে বহিষ্কার করতে জিও নিউজকে উর্ধ্বতন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।”
এর আগে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর অপরাধ আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর সংবাদ পরিবেশনায় প্রসিদ্ধ পাক সাংবাদিক আসাদ আলি তুরের উপর গত সপ্তাহে রাজধানী ইসলামাবাদে তার নিজ বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তি এসময় তাকে পিটিয়ে তার সাংবাদিকতার জন্য শাসিয়ে যায়।
গত ২৮ মে শুক্রবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকের উপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক হামিদ দুষ্কৃতিকারীদের সনাক্ত করতে পাক প্রশাসনকে আহবান জানান। সে সমাবেশে তিনি ন্যক্কারজনক ঘটনার সম্পৃক্ততায় পাক সেনাবাহিনী ও তার প্রধান জেনারেল ক্বামার জাভেদ বাজুয়াকে ইঙ্গিত করে কিছু কথা বলেছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে তার এই অগ্নিঝড়া বক্তব্যের ফলে পাক সেনাবাহিনী তার উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।
সাংবাদিক হামিদ বক্তব্যে বলেন,”যদি আপনি আমাদের বাড়িতে হামলা করেন, তবে আমরা আপনার বাড়িতে কিছুই করবো না। কারণ আপনাদের ট্যাংক ও অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু আমরা জনগনকে আপনাদের ভেতরকার কুকীর্তিগুলি জানাতে পারি।”
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে পাক সেনাবাহিনী কর্তৃক অভিযুক্ত জনগণের অধিকার হরণের উপর একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার পর সাংবাদিক হামিদের উপর কিছু অসনাক্ত লোক গুলি চালিয়েছিল। সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
পাকিস্তানের “রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার” প্রতিনিধি ও ফ্রিডম নেটওয়ার্কের মিডিয়া শাখার প্রধান ইকবাল খাট্টাক বিশিষ্ট সাংবাদিক হামিদ মীরের সংবাদ অনুষ্ঠান পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সাংবাদিকতার ক্ষেত্র দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, সাংবাদিকতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এমনকি এ পেশার কর্মক্ষেত্রে আপনি নিজেকে মেলে ধরার অনুমতিই পাবেন না।”