প্রয়োজনে আমরা দখলদার তুর্কি সৈন্যদের উপরও হামলা চালাবো- তালিবান

7
2307
প্রয়োজনে আমরা দখলদার তুর্কি সৈন্যদের উপরও হামলা চালাবো- তালিবান

ক্রুসেডার আমেরিকা ও ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো যখন একে একে আফগান ছাড়ছে, তখন ন্যাটোর গোলাম রাষ্ট্র তুরস্ক আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে নতুন মিশন ঘোষণা করেছে। এই মিশন বাস্তবায়নে আফগানিস্তানে অবস্থান করবে ন্যাটোর অধীনে আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দখলদার তুর্কি সৈন্যরা।

গত ৪ জুন প্রথমবার এই সিদ্ধান্ত নেয় এরদোগানের নেতৃত্বাধীন সেক্যূলার তুরস্ক, পরে তালিবানদের পক্ষ হতে হুঁশিয়ারি বার্তা দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন চুপ থাকে তুরস্ক। কিন্তু বর্তমানে তুরস্ক নতুন করে আবারো আফগানে তাদের মিশন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এই মিশনের অধীনে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের আন্তর্জাতিক হামিদ কারজাই বিমানবন্দর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক।

নতুন মিশন অনুসারে, ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো আফগানিস্তান ত্যাগের পর তুরস্ক আফগানিস্তানে অবস্থান অব্যাহত রাখবে, এবং কাবুল বিমানবন্দরে নিজেদের দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখবে। তুরস্ক মার্কিন পক্ষকে জানিয়েছে যে, এই মিশনে তারা একা নয়, বরং আরেক মুসলিম নামধারী পাকিস্তান ও হাঙ্গেরি এই মিশনে একসাথে কাজ করবে। ইউএসএ তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত খুবই খুশি হয়েছিল যে, আক্রমণ-পরবর্তী সময়ে তুরস্ক আফগানিস্তানে থাকতে চেয়েছে।

সেক্যূলার তুরস্কের এই সমস্ত সিদ্ধান্তের ফলে তালিবান পক্ষ ফের তুরস্ককে উদ্দেশ্য করে একটি হুঁশিয়ারি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যাতে তুরস্কের নাম পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

“ইসলামিক ইমারাত অফ আফগানিস্তান” স্বাক্ষরিত নতুন এই বিবৃতিতে দখলদার তুরস্ককে স্পষ্টভাবে আফগানিস্তানে না থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। আর তুরস্ক যদি তাদের এসব হঠকারিতা মূলক সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে। তবে গত ২০ বছর ধরে ক্রুসেডার আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে যেভাবে তালিবানরা জিহাদ জারি রেখেছেন, অনুরূপ তুরস্কের বিরুদ্ধেও মুজাহিদগণ পুনরায় দাড়িয়ে যাবেন।

দোহার চুক্তির (আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহার) এর ধারাটির উপর জোর দিয়ে বিবৃতিতে তুরস্ককে আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতি বজায় না রাখার জন্য এবং তাদের নতুন আফগান মিশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তালিবান কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, “প্রত্যেকেই অবগত যে দোহার চুক্তির ভিত্তিতে সমস্ত বিদেশী শক্তি আমাদের প্রিয় স্বদেশ থেকে একে একে সরে আসছে। এই সিদ্ধান্তটিকে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ বেশিরভাগ দেশ স্বাগত জানিয়েছে এবং তা মেনে নিয়েছে। আর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও উপস্থিত ছিল।

এখন তুরস্কের নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে যে তারা আমেরিকার অনুরোধে এবং আমেরিকার সাথে চুক্তি করার মাধ্যমে তাদের সৈন্যদের আফগানিস্তানে রাখবে এবং এখানে দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে তুরস্ককে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে:

১- ইসলামিক ইমারাত অফ আফগানিস্তান এবং আফগান জনগণের তুরস্কের মুসলিম জনগণের সাথে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। এখন তুরস্কের নেতাদের হঠকারিতা মূলক সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে তুর্কি কর্তৃপক্ষের প্রতি বিরক্তি ও শত্রুতা তৈরি করবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষতি করবে।

২- তুর্কি নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপত্তিজনক এবং ভুল। এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়, যা তুর্কি ও আফগান জাতির মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করবে। আমরা তুর্কি কর্তৃপক্ষকে দৃঢ়ভাবে তাদের হটকারি সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহারের পরামর্শ দিচ্ছি, যা উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকর।

৩- আমাদের দেশে বিদেশী সেনাদের অবস্থান, চাই তা যেকোন রাষ্ট্রের যেকোন নামেই হোক না কেন, তাদেরকে দখলদার এবং আগ্রাসী হিসাবেই চিন্তিত করা হবে। আর আমরা ১৪২২ হিজরি ২০০১ ঈসায়ী সনে ১৫ শত বিশিষ্ট আলেমদের জারি করা যেই ফতোয়ার আলোকে গত ২০ বছর ধরে আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ করে আসছি, এখনও সেই ফতোয়ার আলোকেই দখলদার দেশ ও তাদের বাহিনীর সাথে আমরা একই আচরণ করবো।

৪- আমরা তুর্কি মুসলিম জনগণ এবং তাদের জ্ঞানী রাজনীতিবিদদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ এই সিদ্ধান্ত তুরস্ক এবং আফগানিস্তান কারো জন্যই উপকারী না। বরং তুর্কি নেতাদের এই সিদ্ধান্ত কেবল এই দেশগুলির জন্য সমস্যাই সৃষ্টি করবে।

৫- আমাদের নীতি হচ্ছে- সমস্ত দেশের সাথে ভালো এবং ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করা। আমরা অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না বা অন্যকেও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দিই না।

৬- আমরা তুর্কি কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, এই জাতীয় আপত্তিজনক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে স্বীকৃত নীতিগুলির ভিত্তিতে ইতিবাচক এবং ভালো সম্পর্ক স্থাপন করার, একে অপরকে সহযোগিতা করার।

৭- আমরা অনেক সময় যাবত তুর্কি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আসছি এবং অনেক সভা করেছি। এই সভাগুলিতে তারা আমাদের এই আশ্বাস দিয়েছিল যে, তারা আমাদের সম্মতি ছাড়া এ জাতীয় একতরফা কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। কিন্তু তুরস্কের বর্তমান এই সিদ্ধান্ত অন্য কিছুই বলছে, তারা নিজেদের কথারই লঙ্ঘন এবং মুনাফিকদের আচরণ করেছে।

৮- তুর্কি কর্তৃপক্ষ যদি তাদের সিদ্ধান্তগুলি পুনর্বিবেচনা না করে এবং আমাদের দেশে দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখে, তবে তুরস্কের এজাতীয় ধর্মবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে, ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ইসলাম, কর্তব্যপরায়ণ ও দেশপ্রেমিক দায়িত্ব হিসাবে বিগত ২০ বছর ধরে দখলদারদের সাথে যেমনটা করে আসছিল, এখন তুরস্কের বিরুদ্ধেও তাঁরা সেভাবেই দাঁড়াবেন।

সুতরাং এই জাতীয় ক্ষেত্রে, সমস্ত পরিণতির জন্য দায়বদ্ধ একমাত্র তারাই, যারা অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এবং যারা আপত্তিজনক সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য যে, তুরস্কের সরকার পশ্চিমা দেশগুলিকে সন্তুষ্ট করতে, তার স্বার্থ অর্জনে এবং মুসলিম দেশগুলিতে জনগণের উপর চেপে বসা মুরতাদ সরকারকে সমর্থন করার জন্য তৎপর। যেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে তালিবান, আল-শাবাব ও জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম এর মুজাহিদদের বিরুদ্ধ তুরস্ক বছরের পর বছর ক্রুসেডারদের হয়ে যুদ্ধ করছে এবং মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মুরতাদ সরকার ও তাদের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে আসছে। এছাড়াও সিরিয়ায় দখলদার রাশিয়া ও ইরানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে, সিরিয়ান জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নিয়োজিত মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে সবচাইতে বড় ভূমিকাও পালন করে আসছে এই তুরস্ক।

 

7 মন্তব্যসমূহ

  1. এখানে বারবার বলা হচ্ছে যে আমরা সকল দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করতে চাই,যেখানে সমস্ত দেশই দারুল হারব।আর এমন ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন জিহাদি কার্যক্রম শুধু আফগান ভিত্তিক।আর কথার ভাজ দেখে মনে হচ্ছে যে তুরস্ককে একটা মুসলিম প্রশাসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়??

  2. আসলে আনেক ভাইয়ের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে মনে হচ্ছে।
    তাই,কোনো অভিজ্ঞ ভাই সংশয় নিরসন করে কমেন্ট বক্সে পোষ্ট করলে ভালো হয়।
    আর এই বিষয় সংশয় নিরসনার্থে দাওয়াহ ইলাল্লাহ তে একটি পোষ্ট আছে”তালেবান কি জাতীয়তাবাদি?”এই নামে খুঁজে দেখতে পারেন।।ইনশাআল্লাহ।।

  3. রাসূল সাঃ প্রাথমিক দিকে মদিনার আশপাশ ইহূদীদের সাথে চুক্তি করেছেন। কারণ এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় একসাথে সবার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া সামর্থ্য সীমিত থাকা সত্বে। কিন্তু পরে যখন দেখা গেল ইহুদিদের চক্রান্ত & মুসলিমদের সামরিক ধাপটের অগ্রগতি তখন কিন্তু আশপাশ এর দারুল হারবেও যুদ্ধের দাবানাল ঝলে উঠল।

    # বিঃদ্রঃ সংশয়গ্রস্থ ভাইয়েরা! রাসূলের সীরাহ আমাদের সামনে আছে। দুঃখজনক হলেও সত্ব যে আমরা কোরান সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে আছি। না কোরানের গভির জ্ঞন আছে। না সিরাহ এর নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব পড়া আছে (!)

    আপনারা সিরাহ পড়ুন। আন্সার পেয়ে যাবেন।

  4. রাসূল সাঃ প্রাথমিক দিকে মদিনার আশপাশ ইহূদীদের সাথে চুক্তি করেছেন। কারণ এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় একসাথে সবার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া সামর্থ্য সীমিত থাকা সত্বে। কিন্তু পরে যখন দেখা গেল ইহুদিদের চক্রান্ত & মুসলিমদের সামরিক ধাপটের অগ্রগতি তখন কিন্তু আশপাশ এর দারুল হারবেও যুদ্ধের দাবানাল ঝলে উঠল।

    # বিঃদ্রঃ সংশয়গ্রস্থ ভাইয়েরা! রাসূলের সীরাহ আমাদের সামনে আছে। দুঃখজনক হলেও সত্ব যে আমরা কোরান সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে আছি। না কোরানের গভির জ্ঞন আছে। না সিরাহ এর নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব পড়া আছে (!)

    আপনারা সিরাহ পড়ুন। আন্সার পেয়ে যাবেন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তান | মুরতাদ সেনাদের উপর পাক-তালিবানের হামলা, ৫ এরও বেশি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধশরীয়াহর শাসন কেনো জরুরী??