কাশ্মীরী মুসলিমদের উপরে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা যুগ যুগ ধরে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোন বিচার হবে না জেনেই তারা নির্দ্বিধায় মুসলিমদের উপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ৯ই জুলাই, মুসলিমদের অন্যতম আনন্দের দিন ঈদুল আযহার ঠিক এক দিন আগে, অন্যান্যদের মত কাশ্মীরী ভদ্র মহিলা শফিকা তার ছেলের জন্য নতুন জামা কিনেছেন। কিন্তু এখন আর তার পরিবারে ঈদের আমেজ নেই; আছে শুধু ভয় আর হতাশা। নতুন কেনা শার্ট, যা তার ছেলে ঈদের দিন পরার কথা ছিল, এটাই এখন তার কান্নাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ তিনি জানেন না, হিন্দুত্ববাদী পুলিশের হাতে ঈদের দিন আটক কলিজার টুকরা ছেলে বেঁচে থাকবে কি না।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৯ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। শফিকা শঙ্কিত হয়ে পড়েন- যখন কাশ্মীর উপত্যকার নওগাম থানার দুই হিন্দুত্ববাদী পুলিশ বেসামরিক পোশাকে তার বাড়িতে আসে। এবং তার ২১ বছর বয়সী ছেলে মুনিরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। পরে এফআইআর নং ৯৫/২০২২ এর অধীনে একটি চুরির মামলায় জড়িত থাকার মিথ্যে অভিযোগে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তাকে আটক করে।
মুনিরের ২৬ বছর বয়সী চাচাতো ভাই জিশান শওকত বলেন, “তারা শফিকাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তার ছেলেকে নিরাপদে তার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।”
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শফিকাকে পুলিশের ফোন দেয়। তাকে নওগাম থানায় যেতে বলা হয়। তিনি যেতে না চাওয়ায় দুই পুলিশ আবার বেসামরিক পোশাকে এসে জোরপূর্বকভাবে উনাকে ব্যক্তিগত গাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে গাড়ি থামিয়ে শফিকাকে আরেকটি প্রাইভেট গাড়িতে বসতে বলা হয়। গাড়ির দরজা খুলে শফিকা দেখতে পান তার ছেলে একটি সিটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে এবং ভেতরে আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য বসে আছে। যখন তিনি তার ব্যাপারে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, তখন শফিকাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তার ছেলেকে চারজন পুলিশ বাড়িতে নিয়ে আসে।
অথচ তার চাচাতো ভাই শওকত বলেন, “সে সকালে তাদের সাথে পায়ে হেঁটে গিয়েছিল এবং সন্ধ্যায় তারা তাকে অজ্ঞান করে নিয়ে আসে। দুইজন লোক তাকে তার বাহুতে এবং দুইজন তার পায়ে ধরেছিল।” ফলে সহজেই বুঝা যাচ্ছিল হিন্দুত্ববাদী পুলিশ তাকে কেমন অমানবিকভাবে টর্চার করেছে।
বিকাল ৪:৩৮ মিনিটে যাওয়ার আগে, একজন পুলিশ অফিসার তার ফোনে একটি মিস কল করে এবং মুনিরের অবস্থা ভালো না হলে শফিকাকে তাকে একটি কল দিতে বলে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর, শফিকা তার ছেলের জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এক পর্যায় তিনি দেখেন তার ছেলের জ্ঞান ফেরার পরিবর্তে তার শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে আগেই মারা গিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর, শওকত মুনিরের আতঙ্কিত মায়ের কাছ থেকে একটি ফোন কল পান। শ্রীনগরের নাটিপোরা এলাকায় তার বাড়িতে পৌঁছে শওকত মুনিরের ঠান্ডা লাশ মেঝেতে দেখতে পান।
শওকত বলেনে, “আমরা তাকে নিকটস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মুনিরের মৃতদেহ নিয়ে পরিবার রাস্তায় নামে। বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।”
পরিবারকে দমিয়ে রাখতে পুলিশ দাবি করে যে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বাস্থ্যের অবনতিজনিত কারণে মুনিরের মৃত্যু হয়েছে। তারা নিজেদের দোষ চাপা দিতে দাবি করে- সে অতিরিক্ত মদ খেয়েছিল। পরিবারটি এসম ভ্রান্ত দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলে যে, “এত বেশি মাত্রায় মাদক সেবনকারী ব্যক্তি কীভাবে সকালে তার বাড়ি থেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যখন তাকে ধরে নেওয়া হয়েছিল? আর সে তো মদই পান করতো না। তাছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদের সময় যদি তার অবস্থার অবনতি হয়, তবে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কি তাদের দায়িত্ব ছিল না?”
গত ৯ জুলাই রাতে বিক্ষোভের পরে, পুলিশ মুনিরের লাশ ময়নাতদন্তের নামে শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং (SMHS) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট যাচাই করার জন্য বিজয় কুমার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং রাকেশ বালওয়াল, সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসএসপি) এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।
এটা শুধু এক মাজলুম পরিবারের অবস্থা নয়। হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসনে পুরো কাশ্মীরেই মুসলিমরা এমনই অসহায়। তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।
জান-মাল-ইজ্জত-আব্রুর কুরবানি দিতে দিতে কাশ্মীরি মুসলিমরা আজ তাই আগ্রাসি হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, শুরু করেছেন কাশ্মীর স্বাধীন করার ও শরিয়াহ কায়েম করার প্রতিরোধ যুদ্ধ। তাই উম্মাহ দরদী উলামায়ে কেরাম অসহায় কাশ্মীরী মুসলিমদের হয়ে হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসন রুখে দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
তথ্যসূত্র:
——-
1. “Can’t trust police blindly”: Family of Kashmiri youth who killed in custody
– https://tinyurl.com/372h65pw