চীনের কারাগারে উইঘুর মুসলিম ধর্মপ্রচারকের মৃত্যু

0
584

ওমার হোসেইন নামে একজন উইঘুর মুসলিম ধর্মপ্রচারক চীনের জিনজিয়াংয়ের কারাগারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে এক পুলিশ অফিসারের সূত্রে জানিয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়া। মক্কায় হজ্জ করতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল সন্ত্রাসী চীন সরকার।

৫৫ বছর বয়সী ওমার হোসেইন ছিলেন ধর্মপ্রচারক। জিনজিয়াংয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কুরলা-এর কারায়ুলগোন মসজিদে খতিব ছিলেন তিনি। চীনের সন্ত্রাসবাদী কমিউনিস্ট সরকার ২০১৭ সালে মুসলিম আলেম এবং প্রখ্যাত উইঘুর মুসলিমদের উপর এক জঘন্য ক্র্যাকডাউন চালায়। এ সময় ওমার হোসেইনকেও গ্রেফতার করে সন্ত্রাসবাদী কমিউনিস্ট সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০১৫ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে হজ্জ করতে গিয়েছেন!

চীন সরকার ওমার হোসেইনের তিনজন ভাইকেও গ্রেফতার করেছিল ২০১৭ সালে। ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁদের একজনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; সেই ভাইও মারা গিয়েছেন কমিউনিস্ট চীনের কারা কক্ষে।

কমিউনিস্ট সরকার গ্রেফতার করার পূর্বে ওমার হোসেইন ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তাঁকে “পুনঃশিক্ষা” দেওয়ার নামে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা। কথিত ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের নামে তাঁর মতো আরও প্রায় ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে একই কথা বলে বন্দী করেছে সন্ত্রাসী চীন সরকার।

মাহমুত ময়দুন, একজন উইঘুর বন্দী। কুরলা শহরের অন্য একটি কারাগার থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে আছেন। তিনি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, আটককেন্দ্রগুলোর অবস্থা শোচনীয়। গত দুই বছরে ওমার হোসেইনের মতো আরও অনেক বন্দী মারা গেছেন।

নিরাপত্তা শঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুরলার এক বাসিন্দা বলেছেন, নিম্নমানের খাবার, কারাগারে কঠোর পরিশ্রম, দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যয়ন সেশন এবং অবিরাম জিজ্ঞাসাবাদের কারণে বন্দীদের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ওমার হোসেইনকে ২০১৭ সালের এমন একটা সময়ে তুলে নেওয়া হয়েছে যখন কুরলা শহরের আটককেন্দ্রগুলোকে কারাগারে পরিণত করেছিল কর্তৃপক্ষ।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিনিধি কুরলা শহরের কারায়ুলগোন পুলিশ স্টেশনে ২০২১ ও ২০২২ সালে মৃত বন্দীদের তালিকা চেয়ে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কমিশনার এমন কোনো তালিকা দিতে অস্বীকার করে।

হোসেইনের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে সে জেলা পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করতে বলে। সেখানেই নাকি ওমার হোসেইনকে রাখা হয়েছিল।

“আমি আপনাকে এমন কোনো তথ্য দিতে পারব না,” সে বলে। “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

পরে এক জেলা পুলিশ সদস্য নিশ্চিত করেছে যে, হোসেইনকে জেলা কারাগারে রাখা হয়েছিল এবং সেখানেই তিনি ফেব্রুয়ারির দুই তারিখে মারা গেছেন।

“তিনি সুস্বাস্থ্যবান ছিলেন। আগে মোটেও অসুস্থ ছিলেন না,” বলে পুলিশ অফিসার। “আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি (কারাগারের) হাসপাতালে লিভার ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে মারা গেছেন। ছাড়া না পেয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।”

২০১৭ সালের ক্র্যাকডাউনের আগের সময়কে নির্দেশ করে পুলিশ অফিসার বলেছে, “সেই সময়ে, (চীনা কমিউনিস্ট) পার্টি এবং সরকার মক্কায় তীর্থযাত্রা করার জন্য প্রতিনিধিদলের আয়োজন করেছিল; আর তিনি একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে সেখানে গিয়েছিলেন।” তখন চীনা সরকার উইঘুরদের উত্সাহিত করেছিল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে বিদেশ ভ্রমণ করতে।

পুলিশ অফিসার আরও বলে, হোসেইন মক্কায় হজ্জে যাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেফতার করে। এরপর তাঁকে বিচারের মাধ্যমে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ঐ পুলিশ অফিসার বলে, কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে হোসেইনের বাড়িতে গিয়েছিল। তাঁর পরিবারকে একটি গোপন বিচারকার্যের ডকুমেন্ট দিয়ে আসে। তবে পুলিশ অফিসার আর বিস্তারিত কিছু বলেনি।

চার ভাই

ওমার হোসেইনের চার ভাই ছিল। তাঁদের বয়স ৫০ থেকে ৬২-এর মধ্যে। তুর্কি প্রবাসী কুরলার এক উইঘুর অভিবাসীর মতে, ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনা করে সরকার একই পরিবারের বাসিন্দাদের ‘পুনঃশিক্ষা’-এর জন্য তুলে নিয়ে যায়।

ধর্মপ্রচারক ওমার হোসেইনের পাশাপাশি, তাঁর বড় ভাই সামাত হোসেইনও ২০২১ সালে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই তুর্কি প্রবাসী বলেন, সামাত হোসেইন ছিলেন একজন কৃষক। বাস করতেন কারায়ুলগোন শহরের বাগজিগদি গ্রামে। অন্য তিন ভাইয়ের সাথে তাঁকেও গ্রেফতার করে সন্ত্রাসী চীন সরকার।

রহমান এবং আবলেত নামে অন্য দুই ভাই কমিউনিস্টদের “পুনঃশিক্ষা” কেন্দ্রে দুই বছর কাটানোর পর “গ্র্যাজুয়েট” হয়েছে্র। কারণ তাদের আচার-আচরণে “উন্নতি” হয়েছে বলে মনে করে ইসলামবিদ্বেষী কমিউনিস্ট সরকার। অন্যদিকে অপর দুই ভাইকে বিবেচনা করা হয়েছে “সমস্যাজনক” হিসেবে। কারণ তাঁরা নাকি অন্যদের সাথে একত্রিত হয়ে জনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটান!

এই “অপরাধে” চীনা সরকার ওমার হোসেইনকে ৫ বছর এবং সামাতকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়। আর তাঁদের দুজনই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। হোসেইন ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন; আর সামাত মৃত্যুবরণ করেছিলেন ২০২১ সালের শুরুর দিকে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে।

তথ্যসূত্র:

Former Uyghur Muslim preacher confirmed dead in prison in China’s Xinjiang – https://tinyurl.com/329satzz

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরিয়া যুদ্ধের ১১ বছর, প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে ৮৪ জনের
পরবর্তী নিবন্ধইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, মসজিদ নির্মাণে বাধা