গত ২৯ জুন বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলিমরা কুরবানি করেন, সামর্থবানদের উপর এ কুরবানি করা ওয়াজিব। তবে দুঃখজনক হল, আসামসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে হিন্দুদের বাধার কারণে ইচ্ছা এবং সামর্থ থাকার পরও অনেক মুসলিম কুরবানির ওয়াজিব আদায় করতে পারেন নি।
আসামের দক্ষিণ জেলার কাছাড়ের শিলচর শহরে অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করছে। ঈদুল আযহার কুরবানি নিয়ে মুসলিমদের উপর হিন্দুদের সহিংসতার বেশ কিছু ঘটনা ঈদের দিন থেকেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
মুসলমানরা ঈদের দিনে কোনো গরু কোরবানি করে কিনা তা দেখার জন্য হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সদস্যরা শহরের মুসলিম বসতিতে টহল দিয়েছে। হিন্দুরা মুসলিমদের ঘরে ঘরে গিয়ে চেক করতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। যে মুসলিমরা কুরবানি করেছে, তাদের বাড়িতে হিন্দুত্ববাদীরা “ধারালো অস্ত্র এবং লাঠি” নিয়ে প্রবেশ করেছে।
পঞ্চায়েত রোডের স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বৃহস্পতিবার (ঈদের দিন) সকালে বজরং দলের সদস্যরা ওই এলাকার এক মুসলিম ব্যক্তির বাড়িতে গবাদি পশু জবাইয়ের অভিযোগে তদন্ত করতে ঢুকে পড়ে। তারা বাড়ির চত্বরে ভিডিও রেকর্ড করে এবং হট্টগোল তৈরি করে। বজরং দলের সদস্যরা “জয় শ্রী রাম” বলে উচ্চকণ্ঠে শ্লোগান দিতে শুরু করে।
সদ্য বসতি স্থাপন করা হিন্দু জনসংখ্যার চাপে মুসলিমরা একরকম অসহায় হয়ে পড়েছেন সেখানে।
পঞ্চায়েত রোডের পাশের বাসিন্দা থানের আহমেদ বলেছেন, তার বাড়িতে বজরং দলের জনতা হামলা চালিয়েছে এবং তার ভাইকে আক্রমণ করেছে। আর হামলায় তিনি আহত হয়েছেন।
পঞ্চায়েত রোডে ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার দিনটি কিছুটা শান্তভাবে চললেও, শুক্রবার সন্ধ্যায়ই আবার মুসলিমদের উপর হিন্দুরা হামলা শুরু করে। উগ্র হিন্দুদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে বেশ কয়েকজন মুসলিম আহত হয়েছেন।
একজন আহত মুসলিমের পরিবার শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (SMCH) থেকে বাড়ি ফিরার পথে শহরের তারাপুর এলাকায় আবারো হামলার শিকার হয়। সেখানে তাদের গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে হেনস্তা করা হয়, আহত করা হয় নারী সদস্যদেরকেও। পরে ঘটনাস্থলে থেকে আহত আয়েশা সুলতানা ও তার নাবালিকা কন্যাকে চিকিৎসার জন্য এসএমসিএইচে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, তাদের গাড়িতে হিন্দুরা হামলা চালায়।
স্থানীয় মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা সেখানে “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিতে থাকে এবং তাদের ধর্মকে উদ্দেশ্য করে বিদ্রুপের পাশাপাশি পরিবারকে হুমকি দেয়। কাছারের এসপি নুমাল মাহাট্টা রিপোর্টকে জানিয়েছেন যে, ২৯ শে জুন এই ঘটনাটি ঘটেছে।
গবাদি পশু সংরক্ষণ আইন যেন মুসলিমবিরোধী হাতিয়ার
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শিলচরের জনসংখ্যা ১৭২,৮৩০ জন, যেখানে ৮৬.৩১ শতাংশ হিন্দু এবং ১২.১৭ শতাংশ মুসলিম।
এমন স্থানে মুসলিমদের উপর হামলার বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত বলেই প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া সবাই জানে যে, ধর্মীয় উৎসবের (ঈদ) সময় মুসলিমরা কুরবানি করবে। আর ঈদে গরু জবাই বন্ধ করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে ২৪ জুন শিলচর পুলিশের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয় ভিএইচপি ও বজরং দল।
দক্ষিণ আসাম অঞ্চলের ভিএইচপির সভাপতি সান্তানু নায়েক বলেছে, “আমাদের সন্দেহ ছিল যে ‘আসাম ক্যাটেল প্রিজারভেশন অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করে ঈদে শিলচরে গরু জবাই করা হবে। তাই আমরা দাবি করেছি যে – হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় যাতে গোহত্যা না হয়, সেজন্য পুলিশকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তবে ভিএইচপি-র দাবির বিরোধিতা করে পঞ্চায়েত রোডের বাসিন্দা আহমেদ বলেন, “এটি গোহত্যার বিষয় নয়। আমরা যদি একটি ছাগলও কুরবানী করতাম, তাহলেও তারা এটা নিয়েও সমস্যা তৈরি করত। দেখুন, ঈদের (ঈদ-উল-আযহা) অবিচ্ছেদ্য অংশ হল পশু কোরবানি এবং আমরা ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্থানেই এটি করে আসছি। কারণ আমাদের পরিবার এখানেই বসবাস করছে।”
তিনি আরও বলেন, “শিলচর এমন একটি জায়গা যেখানে মুসলমানরা হিন্দুদের মাঝেই বাস করে এবং প্রায় প্রতিটি এলাকার কাছাকাছি মন্দির রয়েছে। তাই মন্দিরের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গবাদি পশু জবাই না করার শর্ত মেনে ঈদের সময় কোরবানি দেওয়া সম্ভব নয়।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আসাম সরকার কর্তৃক গবাদি পশুর জবাই, ব্যবহার এবং পরিবহন নিয়ন্ত্রণের জন্য পাস করা আইনটি রাজ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। গবাদি পশু সংরক্ষণ আইন “প্রধানত হিন্দু, জৈন, শিখ এবং অন্যান্য শাকাহারি সম্প্রদায়ের দ্বারা অধ্যুষিত এলাকায়”, বা যেকোন “মন্দিরের ৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে” গরুর মাংস বা মাংসজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে।
তথ্যসূত্র:
1. In Assam, Hindutva groups raid Muslim houses on Eid to check on slaughtering
– https://tinyurl.com/yck2daub
আমরা অচিরেই আমাদের ভাইদের মুক্ত করতে আসছি ইনশা। সেদিন তারা নির্বিঘ্নে-নির্ভয়েই গরু করতে পারবে ইনশাআল্লাহ