সম্প্রতি পশ্চিমা সমর্থিত সোমালি সরকার প্রধান হাসান শেখ ঘোষণা করেছিল যে, তার বাহিনী আগামী ৫ মাসের মধ্যে হারাকাতুশ শাবাবকে নির্মূল করবে। কিন্তু লড়াইয়ের মাঠের পরিস্থিতি বিপরীত কথা বলছে। কেননা শাবাবকে নির্মূল করতে গিয়ে পশ্চিমা সমর্থিত সামরিক বাহিনীগুলোই উল্টো নির্মূলের ঝুঁকিতে পড়তে শুরু করেছে।
আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব যোদ্ধারা গত ২৬ আগস্ট শনিবার ভোরে কেন্দ্রীয় সোমালিয়ার জালাজদুদ (galgudud) রাজ্যের আসওয়াইনী (عوسويني) শহরে একযোগে ৩টি সামরিক ঘাঁটিতে সুইপিং অপারেশন পরিচালনা করছেন। ১৫ শত সৈন্য সম্বলিত এই ঘাঁটিগুলোতে একটি ইস্তেশহাদী হামলার মধ্য দিয়ে ভোর ৬টায় শুরু হওয়া শাবাবের অভিযান চলেছে সকাল ৯টা পর্যন্ত।
https://twitter.com/Mogadishu_News/status/1696221977378189614?t=gTgV2pHVeAkd0p6ED__UpA&s=19
[এই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত একটি ভিডিও ক্লিপ, যাতে দেখা যাচ্ছে সোমালি সৈন্যরা দলে দলে পালাচ্ছে]
স্থানীয় সূত্রমতে, শাবাবের এই অভিযানে সোমালি স্পেশাল ফোর্সের ১৩ অফিসার সহ অন্তত ২০০ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েক ডজন সৈন্য আহত হয়েছে। সেই সাথে মুজাহিদদের হাতে যুদ্ধবন্দী হয়েছে আরও কমপক্ষে ২০ সৈন্য। ধারণা করা হচ্ছে, হতাহত এবং বন্দী সেনাদের সংখ্যা আরও বেশি।
স্থানীয় সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে যে, এই অভিযানের পর সোমালি স্পেশাল ফোর্সের অনেক অফিসার সহ শত শত সেনা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। যাদের মাঝে ইথিওপিয়া থেকে প্রশিক্ষিত আড়াই হাজার (২,৫০০) সৈন্যেকে নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রধান সেনা কমান্ডারও রয়েছে। এসউইন যুদ্ধের ৭২ ঘন্টা পরেও তার সন্ধান মিলেনি।
এদিকে এই যুদ্ধে আশ-শাবাবের সহায়তায় এগিয়ে আসা স্থানীয় আবগাল গোত্রের নেতারা সোমবার ঘোষণা করেছেন যে, তাঁরা গত কয়েক ঘন্টায় অঞ্চলটি থেকে আরও ৮টি সাঁজোয়া যান উদ্ধার করেছেন। এমনিভাবে শাবাব অনুগত ওয়েসিসেল গোত্রের যোদ্ধারা ঘোষণা করেছেন যে, তারাও বেঁচে যাওয়া সৈন্যদের কাছ থেকে ৬টি গাড়ি জব্দ করেছেন। এই গাড়িগুলোতে করে পশ্চিমা সমর্থিত সোমালি সৈন্যরা পালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শাবাবের আঘাতে এসবের কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল আর কতগুলোর জ্বালানী শেষ হয়ে গিয়েছিল; ফলে কিছুদূর যাওয়ার পর এগুলো অকেজো হয়ে পড়লে সেনারা পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা করে। তখন এই যানগুলো জব্দ করা হয়।
অঞ্চলটিতে চিরুনী অভিযান চালানোর সময় আবার পায়ে হেটে পলায়নরত সোমালি সেনাদের মধ্য থেকে অনেককেই বন্দী করা হয়েছে। আর লুকিয়ে থাকা সৈন্যদের ধরতে চিরুনী অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মোগাদিশুর প্রাক্তন মেয়রের মন্তব্যটিকে অনেক বিশ্লেষক বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন। মেয়রের ভাষ্যমতে, এই যুদ্ধে যা ক্ষতি হয়েছে, তা সোমালি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।
এই অভিযানের পর সোমালি সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন স্থান থেকে পিছু হটতে দেখেও তাদের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা অনুমান করা যায়।
দেশটির সরকারপন্থী সাংবাদিক মোহাম্মদ হোসেন এক রিপোর্টে স্বীকার করেছে যে, আসওয়াইনী (عوسويني) যুদ্ধের পর প্রথম ৭২ ঘন্টায় সরকারি বাহিনী জালাজদুদ রাজ্যের গুরত্বপূর্ণ ৬টি শহর থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো খালি করে চলে গিয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীন সূত্রগুলো বলছে যে, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৮টি শহর থেকে সোমালি সৈন্যরা একরকম পলায়ন করেছে।
যে শহরগুলো থেকে পশ্চিমা সমর্থিত সোমালি সেনারা পিছু হটেছে, সেগুলো হলো:- এল-দির, এল-বুর, গ্যালকাদ, মেসাগাওয়ে, বুদবুদ, ওয়াবু, সাবান শাবলী ও আসওয়াইনী।
সূত্র বলছে, সোমালি সামরিক বাহিনীর কমান্ডো সেন্টারের নির্দেশ ছাড়াই শহরগুলো থেকে সেনারা পশ্চাদপসরণ করেছে।
অপরদিকে আশ-শাবাব সংশ্লিষ্ট শাহাদাহ নিউজ এজেন্সির বলছে যে, সোমালি বাহিনী আসওয়াইনী (عوسويني) যুদ্ধের ৭২ ঘন্টারও কম সময়ে মধ্যে মুজাহিদদের হামলার ভয়ে উক্ত শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার পর মুজাহিদগণ এই শহরগুলো পুনরুদ্ধার করেছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শাবাবকে নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে জালাজদুদ রাজ্যে শাবাব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো দখলে আক্রমণ শুরু করে সোমালি সরকার। আর এই অভিযানে সোমালি বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সমর্থন করে। একই সাথে তুরস্ক তাদের দেশে প্রশিক্ষিত সোমালি সৈন্যদের মাঠে নামায় এবং তুরস্কের নির্মিত ড্রোনগুলো দ্বারা তাদেরকে যুদ্ধে সহায়তা করতে থাকে। কিন্তু এতকিছুর পরেও আল্লাহর ইচ্ছায় মুজাহিদরা বিজয়ের ধারা অব্যহত রেখেছেন।