পাক-আফগান সীমান্ত অঞ্চলস্থ চিত্রালে কয়েকদিন ধরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও প্রতিরোধ বাহিনী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মাঝে তুমুল লড়াই চলছে। এতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। সেই সাথে অনেক এলাকা ও সেনা পোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও উমর মিডিয়ার সূত্রে জানা গেছে, আফগানিস্তানের নুরিস্তান প্রদেশ সংলগ্ন পাকিস্তানের চিত্রাল অঞ্চলে গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সামরিক অপারেশন শুরু করে টিটিপি। এই অভিযান উপলক্ষে টিটিপি মুখপাত্র মুহাম্মদ খোরাসানী সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে চিত্রালের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা নিশ্চিন্ত এবং সন্তুষ্ট থাকুন, এই যুদ্ধে আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আমাদের যুদ্ধ দখলদার ও অত্যাচারী নিরাপত্তা সংস্থার বিরুদ্ধে।”
স্থানীয় সূত্রমতে, এই ঘোষণার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রাল সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অন্তত ২১টি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করছেন টিটিপি যোদ্ধারা। এতে পাকি সামরিক বাহিনীর কয়েক ডজন সৈন্য হতাহত হয়েছে। শামশাদ-নিউজ সহ কয়েকটি বেসামরিক সূত্র দাবি করেছে যে, এদিন ৯০ পাকিস্তানি সেনাকে টিটিপি যোদ্ধারা জীবিত অবস্থায় বন্দী করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এই তথ্য নিশ্চিত করেনি তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা দেশটির সামরিক বাহিনী।
এদিকে টিটিপি সংশ্লিষ্ট উমর মিডিয়া নিশ্চিত করেছে যে, এদিন (০৬/০৯/২৩) সকালে টিটিপির মুজাহিদগণ তাদের প্রথম অপারেশনটি চালিয়েছেন চিত্রাল জেলার বোম্বুরিট এলাকায়। অভিযানের ফলস্বরূপ, মুজাহিদগণ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দুটি পোস্টের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ৬ সেনা সদস্যকে হত্যা করেন।
এদিন অঞ্চলটিতে টিটিপি যোদ্ধাদের দ্বিতীয় অভিযানে ৯ পাকি সৈন্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য হতাহত হয়েছে। এই অপারেশনে আরও ২টি সামরিক পোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
টিটিপি সূত্রমতে, উভয় অপারেশন শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান থেকে মুজাহিদগণ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করেছেন।
এদিকে অভিযান শুরুর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও জোরদার করে টিটিপি।
সূত্রমতে, টিটিপি যোদ্ধারা এদিন চিত্রাল জেলার ৮টি এলাকায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অর্ধশতাধিক সৈন্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত হয়। এসময় মুজাহিদদের পদানত হয় সামরিক বাহিনীর ১৭টি চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্ট থেকে মুজাহিদগণ আর্টিলারি সহ অত্যাধুনিক অনেক অস্ত্র-শস্ত্র জব্দ করেন।
আর সেনাবাহিনী থেকে জব্দ করা এসব আর্টিলারি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এই অঞ্চলে অবস্থিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অন্যতম মিলিটারি ক্যাম্প আর্সুন অবরোধ করেন মুজাহিদগণ, শুরু করেন ভারী আক্রমণ। ফলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে হতাহতের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। এদিকে মিলিটারি ক্যাম্পে আটকা পড়া সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিতে গানশিপ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পাকিস্তান। কিন্তু টিটিপি যোদ্ধারা পাহাড় ও ঘন জঙ্গলকে নিজেদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে গেরিলা স্টাইলে আক্রমণ চালাতে থাকায় কোনো মুজাহিদ হতাহতের শিকার হননি।
টিটিপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৮ তারিখে অবরুদ্ধ মিলিটারি ক্যাম্প আর্সুনে আক্রমণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করেন মুজাহিদগণ। এসময় মুজাহিদগণ সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক আকারে আর্টিলারি ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন টিটিপির প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এতে ক্যাম্পের সমস্ত যানবাহন ধ্বংস হয়ে যায়।
সামরিক ঘাঁটি ছাড়াও অন্যান্য এলাকায় সামরিক বাহিনীর চৌকিগুলো লক্ষ্য করে এদিনও তীব্র আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে অনেক সৈন্য হতাহত হয় এবং মুজাহিদগণ নতুন আরও ৫টি চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণ নেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৯ সেপ্টেম্বর শনিবারও চিত্রালের বিভিন্ন এলাকায় লড়াই চলছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক গণমাধ্যম। সূত্রগুলি আরও জানায় যে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী টিটিপির সামনে যুদ্ধে টিকতে না পেরে সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক লোকদেরকে সেনবাহিনীর জন্য গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, টিটিপি যাতে সেনাবাহিনীর সরবরাহগুলো ধ্বংস করতে না পারে।