এবার হজের জন্য নিবন্ধনের সময় চার দফা বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু কোটার এক তৃতীয়াংশ ফাঁকাই রয়ে গেছে। এবার সরকারিভাবে ৪ হাজার ২৬০ জন এবং বেসরকারিভাবে ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা বরাদ্দ রয়েছে। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও কোনো কোটা পূরণ হচ্ছে না।
খরচ বেড়ে যাওয়াকেই যাত্রী কমার বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে হজের খরচ বেশি। খরচ বাড়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে হজে যেতে পারছেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে।
পাশাপাশি সৌদি আরবে হজের আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে হজ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করতে হচ্ছে। হজ প্যাকেজের একটি বড় অংশ যায় বিমান ভাড়ায়। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, নির্ধারিত বিমান ভাড়া অনেক বেশি নেয়া হয়। সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া বেশি নেয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ই নভেম্বর। যা ১০ই ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয় ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে সেই সময় আরও দুই দফায় বাড়ানো হয়। বিশেষ বিবেচনায় চতুর্থ দফায় সময় দেয়া হয় ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রতি বছরের মতো এবারো সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে খরচ হবে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও আগের বছরের চেয়ে ব্যয় কিছুটা কমিয়ে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। আগের বছরও বেশি ব্যয়ের কারণে হজের কোটা পূরণ হয়নি। গত বছর কোটার চেয়ে ৬ হাজারেরও অধিক যাত্রী কম গিয়েছিলেন হজে।
২০২২ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ওই বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় দুই লাখ ২১ হাজার পর্যন্ত বেড়েছিল। ২০২০ সালে এই প্যাকেজের মূল্য ধার্য করা হয়েছিল জনপ্রতি তিন লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
কোন দেশে কতো খরচ:
পাকিস্তানে হজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় সোয়া চার লাখ টাকার মতো। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হজ কমিটি অব ইন্ডিয়া প্রতি বছর হজ পলিসি ঘোষণা করে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর তারা সর্বনিম্ন যে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে রাজ্য ভেদে সেটি তিন থেকে চার লাখ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা চার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখের মধ্যে।
গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে খরচ করতে হয়েছে তিন হাজার ৩০০ ডলার বা তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা।
মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, সেইসব পরিবারের সদস্যদের জন্য গত বছর সরকারিভাবে হজের খরচ ধরা হয়েছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় এর বেশি হলে দিতে হয় দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা।
হজ এজেন্সিগুলো বলছে, হজ প্যাকেজের অতি উচ্চমূল্যের কারণে হজ গমনেচ্ছুদের অনেকের বাজেটে কুলাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সংসার চালাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থা। হজের জন্য যারা অল্প অল্প করে দীর্ঘদিন টাকা জমান তাদেরও বাজেটে টানাটানি। ফলে অনেকে হজে যেতে পারছেন না। তাদের অনেকেই হজের পরিবর্তে অল্প টাকায় ওমরাহের দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া প্যাকেজের বাইরে আগের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। রিয়ালের তুলনায় টাকার মান আগের চেয়ে কমার কারণে প্যাকেজের বাইরের খরচ বেড়েছে। আগে ৪০০ রিয়াল দিয়ে কোরবানি দেয়া গেলেও এখন ৮০০ রিয়াল প্রয়োজন হচ্ছে।
হজ এজেন্সি আল নুর এয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এজন্য অনেক সাধারণ মানুষ হজে যেতে পারছেন না।
তথ্যসূত্র:
১. কেন কমছে হজযাত্রী
– http://tinyurl.com/nhb2mxfe