ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের ৭৩০ কোটি গেল জলাবদ্ধতায় ডুবে

0
125

বছরের পর বছর যায়, মন্ত্রী-মেয়রের পরিবর্তন হয়, কিন্তু বৃষ্টির মৌসুমে রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না। টানা কিছুক্ষণ ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকার কোনো না কোনো এলাকা ডুববে এটি যেন স্বাভাবিক। অথচ গত চার বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এর সুফল কতটা পাওয়া গেছে, তা ১২ জুলাই শুক্রবার সকালের তিন ঘণ্টার বৃষ্টি দেখিয়ে দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এরপরও অবশ্য হয়েছে, তবে তা ভারী বৃষ্টি ছিল না। কিন্তু সকালের বৃষ্টিতেই ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মৌচাকসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও পানি ছিল হাঁটুসমান, কোথাও প্রায় কোমরসমান।

তবে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল সড়কে যানবাহন ও মানুষের চাপ কম ছিল। কিন্তু ডুবে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে বিকল হয়ে পড়ে ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও প্রাইভেট কার। যে কারণে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ঢাকাবাসীকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানায়। গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য ডিএমপির বার্তায় বলা হয়, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ডুবে গিয়ে রাস্তায় অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে।

পুলিশ তাদের বার্তায় গতকাল দুপুরে বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া রাজধানীর ২২টি এলাকার কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড ও মিরপুর মাজার রোড। তবে প্রকৃতপক্ষে তখন রাজধানীতে ডুবে যাওয়ার এলাকার সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল।

অথচ ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ, পলিথিনজাতীয় বর্জ্য নির্বিচার নর্দমা ও খালে ফেলা হয়।

নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট, গতকালের ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করল। দুই সিটি যা করছে, তা সাময়িক ব্যবস্থা। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করছে তারা। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পার হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে সে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়েছিল। যেমন গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এক অনুষ্ঠানে সে বলেছিল, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্কাশিত হবে।

সবশেষ গত ১৯ মে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস বলেছিল, ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। গতকালের বৃষ্টিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেক এলাকার পানি ১২ ঘণ্টায়ও সরেনি। সকালের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া মতিঝিল, কমলাপুর, গ্রিন রোড ও ঢাকা কলেজ এলাকায় সন্ধ্যার পরও পানি ছিল বলে স্বীকার করেছে দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারাই।


তথ্যসূত্র:
১. রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭৩০ কোটি টাকা জলাঞ্জলি
– https://tinyurl.com/9f5fpbvz

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬টি প্রদেশে আন্তর্জাতিক মানের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন স্থাপন করবে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১২ জুলাই, ২০২৪