আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমে ইসলাম বিরোধী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদি আন্দোলনের যেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দীর্ঘদিন ধরে জ্বলছে তা এখন আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ফলে গত সপ্তাহে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে জিহাদি আন্দোলনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এক অভিযানেই অন্তত ২৮০ সেনা সদস্য নিহত হওয়েছে বলে জানা গেছে।
আয-যাল্লাকা সহ স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট শুক্রবার সকালে বুরকিনা ফাসোতে একটি ফলো-আপ আক্রমণ চালিয়েছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) যোদ্ধারা। অতর্কিত আক্রমণটি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ফাদা এবং বোঙ্গুর শহরের মধ্যবর্তী নাসোগাউ এলাকায় একটি সামরিক কনভয় ঘেরাও করে চালানো হয়েছে। হামলার শিকার কনভয়টি বুরকিনান জান্তাবাহিনীর ৯০০ সেনা, ৩ শতাধিক সাঁজোয়া যান ও গাড়ি, কয়েকশো মোটরসাইকেল নিয়ে গঠিত ছিলো। জানা যায় কনভয়টির বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন প্রতিরোধ বাহিনীর ‘জেএনআইএম’ এর দুই শতাধিক মুজাহিদ। যারা কয়েকটি সাঁজোয়া যান আর শতাধিক মোটরসাইকেলে আরোহী হয়ে ভারী ও মাঝারি অস্ত্র দ্বারা বিভিন্ন দিক থেকে কনভয়টি লক্ষ্য করে অতর্কিত আক্রমণ চালান। এতে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে জান্তা বাহিনী, ঘটে বিপুল হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা।
প্রতিরোধ আন্দোলনের (জেএনআইএম) সামরিক নেতৃত্ব এই অভিযান সম্পৃক্ত প্রাথমিক এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছিল যে, কনভয়টি লক্ষ্য করে মুজাহিদদের পরিচালিত অভিযানে ১৪৮ এরও বেশি জান্তা সদস্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত ও বন্দী হয়েছে। এসময় কনভয়টিতে থাকা ২৩ অত্যাধুনিক সামরিক যান সহ অন্তত ১১৬টি যানবাহন ধ্বংস হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে যে, অভিযান শেষে মুজাহিদগণ গনিমত হিসাবে অর্জন করেছেন ৭টি অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান, ২০টি সামরিক গাড়ি, কয়েক ডজন মোটরসাইকেল, ২টি স্নাইপার, ১৩৮টি ক্লাশিনকোভ, ৫৩টি পিকা, ৬টি দুশকা, ৩টি কামান, ২৬টি রকেট লঞ্চার, ৮৩টি আরপিজি শেল, ৪টি ৬০মিমি মর্টার, ৬টি পিস্তল, ৫৮০টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ ভর্তি বাক্স এবং অন্যান্য অসংখ্য সামরিক সরঞ্জাম।
অপরদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রগুলো জানায়, বুরকিনান জান্তা বাহিনীর ৯০০ সেনা আর অসংখ্য সাঁজোয়া যান নিয়ে গঠিত বিশাল কনভয়টিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে মাত্র দেড় ঘন্টা সময় নিয়েছে আল-কায়েদা যোদ্ধারা। এসময় জেনিম যোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে অন্তত ২৮০ সেনা সদস্য নিহত এবং আরও কয়েক শতাধিক সৈন্য আহত হয়েছে, একইসাথে অনেক সেনা সদস্যকে বন্দীও করেছে সশস্ত্র দলটি। জান্তা বাহিনীর বাকি সদস্যরা জীবন বাঁচাতে বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে তাদের বড় একটি অংশকেও সেখানে তাড়া করে নিষ্ক্রিয় করেন ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধারা। আর অভিযান শেষে কনভয়টি থেকে বেশ কিছু সামরিক যান, ড্রোন, ভারি অস্ত্র, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য আধুনিক অনেক সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করেন মুজাহিদগণ, যেগুলো তুর্কী ড্রোনগুলো এই অঞ্চলে হামলা শুরু করার আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে ‘জেএনআইএম’।
সূত্রমতে, বুরকিনা ফাসোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ‘জেএনআইএম’ এর পরিচালিত এই অভিযানে যেসমস্ত সৈন্য বন্দী হয়েছে, তাদের মধ্যে কনভয়টির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা “বিআইআর-৫” নামক সামরিক ইউনিটের চিফ সার্জেন্ট আবুগৌর আবদুল সহ একাধিক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা রয়েছে।
বিআইআর-৫ নামক এই সামরিক ইউনিটটিকে বুরকিনা রাষ্ট্রপতির কর্তৃক সবচাইতে দক্ষ এবং সেনাবাহিনীর সেরা সজ্জিত ইউনিট বলে মনে করা হয়। ইউনিটটি জান্তার অন্যান্য সামরিক ইউনিটগুলির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। কিন্তু ৯ তারিখের যুদ্ধে এই ইউনিটটিই সবচাইতে বেশি সৈন্য হারিয়েছে।