কুষ্টিয়ায় বালুর ঘাট ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, অস্ত্রের মহড়া

0
45

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদের খনন করে তোলা বালু বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশ, অস্ত্রের মহড়া ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘর ও বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া এলাকায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ও বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুই দিন ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই বালুঘাট থেকে সাময়িকভাবে বালু অপসারণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গড়াই নদ খননের ফলে তোলা বালু স্তূপাকারে নদের পাড়ে রাখা হয়েছে। এই বালু এখন অপসারণের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নদের জুগিয়া ও গোপীনাথপুর মৌজায় রাখা বালুর স্তূপ সরানোর জন্য চলতি বছরের ১০ জুন মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মহিদুল ইসলামকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দরদাতা হিসাবে কার্যাদেশ দেয় পাউবো। এ কার্যাদেশে আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বালু অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে মহিদুল বালু অপসারণ করে বিক্রি করে আসছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিদুল ইসলাম পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এক যুগের বেশি সময় ধরে বালুঘাট তার নিয়ন্ত্রণে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জুগিয়া বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষ। এতে বারখাদা ও জুগিয়া এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, শহর যুবদলের সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ওরফে জনি, ছাত্রদল নেতা রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাব্বির সঙ্গে মহিদুলের সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল পাবে ৪০ শতাংশ এবং বিএনপি নেতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ ভাগাভাগির শর্তে কয়েক দিন আগে বালু অপসারণ শুরু হয়। এ সমঝোতার সঙ্গে জড়িত নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকারের অনুসারী। প্রতিদিন সেখান থেকে দেড় শতাধিক ট্রাকে অন্তত চার–পাঁচ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।

বালু বিক্রির টাকার ভাগ না পেয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের অনুসারী শাহজাহান আলী ওরফে সাজুর অনুসারী কর্মীরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালু পরিবহন ও বিক্রির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের দাবি, বালুবাহী ট্রাকের কারণে এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে বালুঘাট ইজারা বন্ধসহ বালুবাহী ট্রাক বন্ধের দাবি জানায়।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুগিয়া ঘাটে বালু অপসারণ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। বিএনপি নেতা শাহজাহান আলী এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালু পরিবহন বন্ধের দাবি জানালে মহিদুল ও বিএনপির একটি পক্ষের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একই ঘটনায় বুধবারে বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মহিদুল, তার ভাই-ভাতিজা আর বিএনপির একটি পক্ষ এক হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। এ সময় বিএনপি নেতা শাহাজাহান, মিজানুর রহমানসহ এলাকার লোকজন একত্র হয়ে তাদের প্রতিহত করতে পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র হাতে এক যুবককে দৌড়াতে দেখা গেছে। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। গুলির শব্দও শোনা গেছে।

এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, জুগিয়ায় বালু তোলার কারণে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমানের দোসর মহিদুল ইসলাম। তার কারণে এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারছেন না। বালুর ট্রাকের কারণে এলাকার দুই কিলোমিটার পাকা সড়ক কাচা হয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ।


তথ্যসূত্র:
১. কুষ্টিয়ায় বালুর ঘাট ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা, অস্ত্রের মহড়া
– https://tinyurl.com/mtpubb65

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেস্তা বাদাম চাষে রূপান্তরিত হচ্ছে কান্দাহার প্রদেশের আফিম চাষের অসংখ্য কৃষি জমি
পরবর্তী নিবন্ধভিডিও || এক নজরে তালেবান স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিগত বছরের মূল অর্জনসমূহ