মার্কিন কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকী, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে রাষ্ট্রপতির ক্লিমেন্সীর আবেদন চেয়েছিলেন, তবে তিনি ক্লিমেন্সী লাভ করেননি। তার আইনজীবী ক্লাইভ স্টাফোর্ডের মাধ্যমে ক্লিমেন্সী আবেদন করা হয়েছিল, সঙ্গে ৭৬,৫০০ শব্দের একটি দলিলগুচ্ছ দাখিল করা হয়েছিল।
ধারণা করা হয়েছিল, এসব নথি আফিয়া সিদ্দিকীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সাহায্য করবে। তবে, বাইডেনের শেষ কর্মদিবসে প্রকাশিত ক্লিমেন্সী তালিকায় ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকী ছিলেন না।
গত ২০ জানুয়ারি বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাইডেন তার শেষ কার্যদিবসে পাঁচজনের ক্লিমেন্সি সাইন করেছে। কিন্তু আফিয়া সিদ্দিকী তাদের মধ্যে ছিলেন না। যাদের ক্লিমেন্সি দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন: ড্যারিল চেম্বার্স, মার্কাস মোসিয়া গারভি, রাভিদাথ রাগবির, ডন লিওনার্ড এবং কেম্বা স্মিথ। এছাড়াও, হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছে যে, আরও দুজনের সাজা কমানো হয়েছে।
একটি প্রেস রিলিজে বাইডেন তার পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করে বলেছে, ‘আমেরিকা এমন একটি দেশ যেখানে দ্বিতীয় সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আমি তাদের ক্লিমেন্সি প্রদান করেছি যারা পুনর্বাসন, অনুশোচনা এবং মুক্তি চেয়েছেন।’
বাইডেনের হোয়াইট হাউস ত্যাগের কয়েকদিন আগে, ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকী তার মুক্তির আশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি আমাকে ভুলে যাওয়া হবে না এবং একদিন শীঘ্রই মুক্তি পাব। আমি প্রতিদিন অন্যায়ের শিকার হয়ে যন্ত্রণা সহ্য করেছি, যা সহজ ছিল না। তবে ইনশাআল্লাহ, একদিন আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব।’
এদিকে, ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তি নিয়ে পাকিস্তানি সরকারের অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক বিশ্লেষকের মতে, যদি পাকিস্তানি সরকার চাইতো, তারা সহজেই ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীকে মুক্তি দিতে পারত। পাকিস্তানি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বেশিরভাগই তাকে মুক্তি দিতে চায় না, কারণ তিনি মুক্ত হলে তিনি প্রকাশ করতে পারেন যে, পাকিস্তান সরকার তাকে কীভাবে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করেছিল।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ইয়ভোন রিডলি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তালেবান মুজাহিদিনরা কয়েক বছর আগে এক বন্দী বিনিময়ের পরিকল্পনা করেছিল, এবং আফিয়া সিদ্দিকী সেই চুক্তিতে ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI) হুমকি দিয়েছিল যে, তিনি পাকিস্তানে পৌঁছানোর সাথে সাথেই তাঁকে হত্যা করা হবে, ফলে ওই বিনিময় চুক্তিটি এগিয়ে যায়নি।
আফিয়া সিদ্দিকীর মামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে, এবং অনেকেই তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে আল-কায়েদার একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে দাবি করেছিল যে, তিনি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। তিনি একমাত্র নারী, যাকে গোপন স্থানে নিয়ে গিয়ে কঠোর শর্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত জানিয়েছিল যে, ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই, তবে আফগানিস্তানের ওই ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীর আইনজীবী স্টাফোর্ড স্মিথ দাবি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তার ব্যাপারে ভুল ধারণা করেছে, প্রথমে তারা ভাবছিল তিনি তেজস্ক্রিয় বোমায় কাজ করছেন, অথচ তিনি আসলে পিএইচডি ধারী একজন গবেষক।
উল্লেখ্য যে, ৫২ বছর বয়সী ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকীকে ২০১০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দী অবস্থায় একজন এফবিআই এজেন্টকে হত্যা চেষ্টার কথিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র:
1. President Joe Biden denies pardon request for Dr. Aafia Siddiqui
– https://tinyurl.com/3kxf43ms
2. Joe Biden denies clemency for Dr Aafia Siddiqui.
– https://tinyurl.com/4z9dp9kt