
ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যাওয়া আন্তর্জাতিক নৌবহর সুমুদ ফ্লোটিলায় হানা দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলা চালিয়ে তারা জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়, জলকামান ছুড়ে আক্রমণ চালায় এবং দুই শতাধিক কর্মী ও মানবাধিকারকর্মীকে আটক করে। ভূমধ্যসাগরে সংঘটিত এ দস্যুবৃত্তিমূলক ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দা ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইস্তানবুল, এথেন্স, রোম, বার্লিন, মাদ্রিদ, বুয়েনস আয়ার্স ও মেক্সিকো সিটিসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ সড়কে নেমে ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।
ইতালিতে বিক্ষোভ
দেশটির দক্ষিণের শহর নেপলসে প্রতিবাদকারীরা প্রধান রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। আর রাজধানী রোমে টার্মিনি রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে জমায়েত হওয়া প্রতিবাদকারীদের চারপাশে পুলিশ ঘিরে রেখেছে।
আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আটক কর্মীদের মুক্তির দাবি করেন। জানা গেছে, আটক হওয়া জাহাজগুলোর একটিতে রয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতা সেলেস্ট ফিয়েরো।
আয়ারল্যান্ডের উদ্বেগ
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এ ঘটনাকে “শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগের ওপর হামলা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সে বলেছে, ফ্লোটিলার সদস্যদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করতে হবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ফ্লোটিলায় থাকা আইরিশ নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
কলম্বিয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত
কলম্বিয়া কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিষ্কার এবং দুই দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন। এক্সে দেওয়া বার্তায় তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে “নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধী” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তাকে বিশ্বব্যাপী গ্রেফতার করা উচিত।
ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি সদস্য এমা ফুরো আহ্বান জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। সে বলেছে, “ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ করো, বৈশ্বিক অর্থনীতি পঙ্গু করে দাও, গাজার অবরোধ ও গণহত্যা শেষ করো।” এমা নিজেও ফ্লোটিলার একটি জাহাজে অবস্থান করছে।
মালয়েশিয়ার প্রতিক্রিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের পদক্ষেপকে “ভীতি প্রদর্শন ও জবরদস্তি” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজায় খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী নিয়ে যাওয়া নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বাধা দিয়ে ইসরায়েল মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা করেছে। আটক হওয়া জাহাজগুলোতে ১২ জন মালয়েশীয় নাগরিকও আছেন।
তুরস্কের অবস্থান
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে ‘ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতি’র বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে। তারা জানিয়েছে, আটক হওয়া তুর্কি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনে নিযুক্ত বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেছে, “ইসরায়েল অবৈধভাবে সেই মানুষদের অপহরণ করছে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে এসেছে। পশ্চিমা সরকারগুলো তাদের নীরবতার মাধ্যমে এই অপরাধের সহযোগী হয়ে উঠেছে।”
ফ্লোটিলার ঘোষণা
ইসরায়েলি হামলার পরও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, তাদের মানবিক মিশন থেমে থাকবে না। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “গাজার মানুষের কাছে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
গাজায় অবরোধ ভাঙতে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকিয়ে ইসরায়েল আবারও প্রমাণ করেছে যে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি হলো লুণ্ঠন, দস্যুবৃত্তি ও রক্তক্ষয়ী দমননীতি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যতই তীব্র নিন্দা জানাক, দখলদার রাষ্ট্রের এই অবৈধ আগ্রাসন এক ভয়াবহ সত্য প্রকাশ করছে—গাজার উপর চিরস্থায়ী দমন চালাতে ইসরায়েল পশ্চিমা প্রভুদের নীরব অনুমোদন নিয়েই এগোচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
1. How the world is responding to Israel’s interception of the Gaza flotilla
– https://tinyurl.com/ne7nhwxs


