
আরাকানের বুথিডং শহর দখলের পর থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ দমন–পীড়ন চালাচ্ছে। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, এএ–র হাতে আটক রোহিঙ্গা নাগরিকদের বুথিডং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
গত ৬ নভেম্বর ‘রোহিঙ্গা খবর’-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের আটক করছে এএ সশস্ত্র সদস্যরা। যাদের তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত বা সহযোগী মনে করছে, তাদের ওপর চলছে নির্যাতন। আটক ব্যক্তিদের কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া, আইনজীবীর সহায়তা বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে বুথিডং কারাগার পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্রে।
বন্দিদের কারাগারে নিতে দেওয়া হয় কেবল একটি পোশাক। দিনে একবার অল্প খাবার দেওয়া হয়, যার ফলে অপুষ্টি, রোগ–ব্যাধি ও দুর্বলতা নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, জ্বর–বমিসহ নানা অসুখে অনেকেই ভুগছেন। চিকিৎসা কিংবা ওষুধের কোনো ব্যবস্থা নেই। অসুস্থদের কেবল একটি প্যারাসিটামল দিয়ে বলা হয় ‘অপরাধীদের জন্য চিকিৎসা নেই’। চিকিৎসার অভাবে বহু বন্দি মৃত্যুবরণ করেছেন; রাতের আঁধারে তাদের লাশ গোপনে সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানা গেছে।
প্রতি ১৫ দিনে একবার গোসলের অনুমতি মেলে, তবে গোসল শেষে বাধ্য হয়ে পরতে হয় সেই ভেজা পোশাকই। বন্দিদের সারারাত জেগে থাকতে বাধ্য করা হয়; ঘুমালে বা নির্দেশ না মানলে তাদের নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। এএ–র সদস্যরা প্রায়ই কারাগারে ঢুকে লাঠি, লোহার রড ও ঘুষি দিয়ে বন্দিদের মাথা–মুখে আঘাত করে বলে জানা গেছে।
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ফলে বন্দিদের জীবিত না মৃত সে খবর পরিবারগুলো জানতে পারছে না। গরম ও বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বন্দিদের দিন কাটছে এক মানবেতর অবস্থায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুথিডং কারাগারে বর্তমানে দেড় হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আটক আছেন, যারা প্রতিদিন আরাকান আর্মির সন্ত্রাস, নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার হচ্ছেন।
তথ্যসূত্র:
1. Rohingya Civilians Tortured and Detained in Buthidaung Prison, Witnesses Say
– https://tinyurl.com/mpsa7n3j


