
দক্ষিণ সোমালিয়ার জামামে শহরে মার্কিন বাহিনী এবং তাদের মদদপুষ্ট মোগাদিশু বাহিনী যৌথভাবে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি নৃশংস আক্রমণ চালিয়েছে। এতে নারী ও শিশুসহ ১২ জন বেসামরিক নাগরিক শহীদ এবং আরও ৯ জন আহত হয়েছেন।
শাহাদাহ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ নভেম্বর শনিবার, মার্কিন বাহিনী এবং মোগাদিশু বাহিনী এক নৃশংস আক্রমণ চালিয়েছে। দক্ষিণ সোমালিয়ার নিম্ন জুবা রাজ্যের জামামে শহরে ঠান্ডা মাথায় পরিচালিত উক্ত ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়েছেন বারোজন বেসামরিক নাগরিক, আহত হয়েছেন আরও নয়জন। এসময় বেসামরিক লোকদের বাড়িঘর এবং তাদের সম্পত্তিও ধ্বংস করে হামলাকারীরা।
সূত্রমতে, জামামেতে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণের মাধ্যমে রক্তাক্ত এই গণহত্যা শুরু করা হয়। মার্কিন বাহিনী এবং মোগাদিশু বাহিনী বিমান কামান ব্যবহার করে এদিন আক্রমণটি চালায়। আগ্রাসী বিদেশি বাহিনী ও স্থানীয় শত্রু বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে শহরের বেসামরিক বাড়িঘর, দোকানপাট এবং কিছু শিক্ষাকেন্দ্রকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে এই হামলাটি পরিচালনা করে। স্পষ্টতই এই হামলার লক্ষ্য ছিল, শরিয়াহর ছায়াতলে বসবাসরত জনগণকে আতঙ্কিত করা। আর এই ভয়, আতঙ্ক এবং রক্তপাত ছড়িয়ে শত্রুরা বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করতে চায়।
মার্কিন ও মোগাদিশু বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত গণহত্যায় শহীদ বারোজন বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে ৮ জন শিশু, ৩ জন মহিলা এবং ১ জন বৃদ্ধ ছিলেন। হামলায় বিভিন্ন বয়সী আরও ৯ জন আহত হয়েছেন।
এটিই প্রথমবার নয় যে মার্কিন বাহিনী তাদের সহযোগী মোগাদিশু বাহিনীর সাথে মিলে সোমালিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর আক্রমণ করেছে। আর এই সব কিছুই চলছে কোনোপ্রকার বিচারের মুখোমুখি না হওয়া ও বাধা ছাড়াই। এমনকি নিরপেক্ষ মিডিয়া কাভারেজও এসব কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। আর এসব নৃশংস হামলার ভুক্তভোগীরা নিজেদের আইনি অধিকার রক্ষা করতে পারছেন না।
যৌথ বাহিনী পূর্বে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এবং যাযাবর এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। আর হামলার পর নির্লজ্জভাবে নারী ও শিশুদের হত্যার দায় অস্বীকার করেছে। কিছু মানবাধিকার সংস্থা সোমালিয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে আমেরিকার পরিচালিত এইসব অপরাধগুলো নথিভুক্তি করা সত্ত্বেও বারবার বিচার হীনতার অভাবে এধরণের অপরাধ ঘটছে।
বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, আমেরিকার এধরণের আক্রমণগুলি মূলত বেসামরিক নাগরিকদের উপর পরিচালিত বাস্তব সামরিক প্রশিক্ষণ অনুশীলন। এসবের মাধ্যমে জীবন্ত লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সরকারি মিলিশিয়াদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। এই বাহিনী গত বছর জালাজদুদ অঞ্চলের এল জারাসের উপকণ্ঠেও একটি গ্রামে সরাসরি হামলা চালিয়ে একজন দাদী, তার নাতি-নাতনি এবং পুরো গবাদি পশুর পালকে হত্যা করেছিল।
আশ-শাবাবের উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং যুদ্ধ-প্রতিভাবান যোদ্ধাদের সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করার পরিবর্তে, ক্রুসেডাররা তাদের ক্রোধ এবং হতাশাকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করছে, যাতে এই জনগণকে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা যায়।
শাহাদাহ নিউজ এজেন্সি কর্তৃক প্রচারিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, এই বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিরা, যাদের মধ্যে সরাসরি আঘাতে নিহত শিশুরা এবং আহতরাও রয়েছেন। হতাহতদের দৃশগুলো দেখার পর এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই: কেন মার্কিন বাহিনী এই অঞ্চলে তাদের ঘাঁটি থেকে গ্রামবাসীদের উপর এবং তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুলে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য অভিযান চালায়? এর একমাত্র ব্যাখ্যা হল মুসলিমদের প্রতি তাদের অন্ধ ঘৃণা।
নিশ্চই আমেরিকার এই আগ্রাসন, গণহত্যা এবং রক্তপাত বৃথা যায় না। বরং তারা একটি ভয়াবহ এবং চলমান আদর্শিক সংঘাতের ইন্ধন জোগায়, যা কেবল দেশে আশ-শাবাবের বিশ্বাসযোগ্যতা, শক্তি এবং নিয়োগ প্রচেষ্টাকে বাড়িয়ে তুলছে।
তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/yjed2tcs


