পাশ্চাত্যের গোলামীর জিঞ্জির ভেঙে নববী মানহাজে ফিরে আসার আহ্বান (পর্ব -০১)

0
33

আল ফিরদাউস এর সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম

বলছিলাম- বাংলাদেশ নামক এই মুসলিম ভূমির অধিবাসীদের কথা!
এই ভূমির ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইতিহাস যতই উন্মোচন করা হয়, ততই এক বেদনাবিধুর সত্য চোখে পড়ে-
এ ভূখণ্ডে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে বহুবার, কিন্তু শোষণের হাত কখনো থেমে নেই।

বহুকাল ধরে দেশি-বিদেশি শাসকগোষ্ঠী এদেশের মাটিতে ঈমানদার মানুষের বুকের ওপর বসে শাসন করেছে।
ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেগে আছে মুসলমানদের আর্তনাদ-
কারণ এই ভূখণ্ডে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু উপনিবেশের সময়কাল থেকে নিয়ে আজো পর্যন্ত ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা, ইসলামী মূল্যবোধের সম্মান, ইসলামী শরিয়াহ- কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

স্বার্থবাদী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলো সবসময় মুসলিম জনতাকে মিথ্যে আশার প্রলোভন দেখিয়েছে। ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে তারা ক্ষমতায় এসেছে, উম্মাহর নাম ব্যবহারে বক্তৃতা সাজিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কখনোই প্রদান করেনি।
বরং এমন আইন, এমন নীতি চাপিয়ে দিয়েছে, যা ইসলামী শরিয়াহর পরিপন্থী।

আর সবচেয়ে ভয়াবহ- যখনই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে বেয়াদবি হয়েছে, তখন রাষ্ট্র নীরব থেকেছে! যারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার তাগিদে প্রতিবাদ করেছে, তারাই উল্টো নির্যাতিত হয়েছে! রাষ্ট্র কর্তৃক কটূক্তিকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, আর তাওহিদবাদী মানুষের কন্ঠ রোধ করা হয়েছে নানা অজুহাতে!

এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিরীহ দাবি – কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের ঘোষণা করা, কিন্তু সেক্যুলার রাষ্ট্র বরাবরই কাদিয়ানী ফিতনা নিয়ে উদাসীনতা দেখিয়েছে, কাদিয়ানীদের পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে!
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটূক্তি করে যারা বাজে ভাষায় নাস্তিক্যবাদ ছড়িয়েছে, রাষ্ট্র তাদের প্রতি বারবার শিথিলতা দেখিয়েছে!
সব মিলিয়ে স্পষ্ট প্রমাণ যে, এই মাটির মুসলমানদের ঈমানি অনুভূতির কোনো মূল্যই নেই ক্ষমতার দালানকোঠায়।

অপরদিকে সেক্যুলার রাজনৈতিক শক্তির গুন্ডাবাহিনীর দুই পা জুড়ে আছে এদেশের সাধারণ মানুষের বুকের ওপর। গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট- এসব যেন এখন দেশের প্রতিদিনের খাবার! মানুষের রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে ক্ষমতার সিঁড়ি। আর আমাদের মা-বোনেরা আজ নিরাপত্তাহীনতার ছায়ায় দিন কাটাচ্ছে!

আইন-আদালত যেন এক অদৃশ্য রহস্যের নাম; ন্যায়বিচার এখানে এমন এক বস্তু, যা কেবল বইয়ে পড়া যায়। প্রশাসনের ভেতরে ভেতরে দুর্নীতি এমনভাবে শিকড় গেড়েছে- বাজেট আর প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন এখন এক ধরনের ফ্যাশন হয়ে গেছে!
আর সেই লুটপাটের বোঝা বইতে হচ্ছে খেটে-খাওয়া মেহনতি মানুষদের; যাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে!

কথিত সুশীল সমাজ যেন উদ্ভট চশমা পরে আছে; যেখানে সত্য অন্ধকার, মিথ্যা আলো ছড়ায়! তারা পাশ্চাত্যের নষ্ট সভ্যতার প্রতি এমন মোহগ্রস্ত যে, এদেশের ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংস করাটাই যেন তাদের একমাত্র সাধনা!
যুব সমাজকে বিচ্যুতি আর অশ্লীলতার দিকে ঠেলে দেওয়াই যেন তাদের লক্ষ্য!

ইসলামী চেতনা, ঈমান ইত্যাদি সবকিছু উপেক্ষা করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পাশ্চাত্যের সেক্যুলার আইন।
এই ভূমির মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় দাবি, ধর্মীয় পরিচয়- সবই অযত্নে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
রাষ্ট্রযন্ত্র পশ্চিমাদের গোলামীর জিঞ্জির গলায় ঝুলিয়ে সেটাকেই সম্মানের মালা হিসেবে গর্ব করে দেখিয়েছে!

অথচ এদেশের মানুষ মুসলিম
তাদের ইতিহাস- শুধুই ইসলামের ইতিহাসে সমৃদ্ধ,
তাদের চেতনা ইসলাম।
তাদের রক্ত-মাংসে মিশে আছে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা!

তাই এখন সময় এই ভুলে যাওয়া আত্মপরিচয় পুনরুদ্ধারের। সময় এসেছে পাশ্চাত্যের গোলামীর শিকল ছিঁড়ে ফেলে নববী মানহাজে ফিরে যাওয়ার। আল্লাহর দ্বীনকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়ার এবং ইসলামী শরিয়াহকে জীবনের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করার।

একমাত্র ইসলামী শরিয়াহই পারে এই ভূমিকে ন্যায়, শান্তি, মর্যাদা ও মানবতার আলোয় আলোকিত করতে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগান ভূমিতে আবারও পাকিস্তানের আক্রমণ, বাধ্য হয়ে ইমারাতে ইসলামিয়ার পাল্টা আক্রমণ
পরবর্তী নিবন্ধইমারাতে ইসলামিয়ার জাতীয় ক্রয় কমিশনে ৩ বছরে ৫৬২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন