ভারতের অযোদ্ধার আলোচিত বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৭তম বার্ষিকী আজ শুক্রবার। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মসজিদটিকে শহিদ করে দেয়। অযোধ্যা মামলার রায়দানের পরেও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ অব্যাহত৷ প্রতিবারের মতো এ বারেও দিল্লি থেকে কলকাতা, সর্বত্রই হলো মিটিং মিছিল প্রতিবাদসভা৷
জামা মসজিদে প্রতিবাদ
জুম্মার নামাজের পরে দিল্লি জামা মসজিদের বাইরে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল প্রতিবাদ সভা৷ দিল্লির মাটিয়ামহলের প্রাক্তন বিধায়ক শোয়েব ইকবাল সেখানে বলেন, যাঁরা মসজিদ ভাঙল তাঁদের শাস্তি কবে হবে?
প্রতিবাদে ছোটরাও
জামা মসজিদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিল ছোটরাও৷ তাদেরও হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘বিচার চাই’৷
প্রতিবাদ মিছিল
সভার শেষে মহল্লায় মহল্লায় মিছিল করে প্রতিবাদকারীরা৷ তাতে যোগ দেন রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ৷
তোমার আমার পাপ
মান্ডি হাউসের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরাও৷ তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, যে ভাবে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল তা লজ্জার৷ পাপ৷
পিছিয়ে নেই কলকাতাও
এ দিন দিল্লির মতোই কলকাতাতেও বিশাল মিছিল হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে৷ ১২টি সংগঠন এক সঙ্গে মিছিলে পা মেলান৷
পাশে অনেকেই
সন্ত্রাসী দল বিজেপি দাবি করছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অযোধ্যা নিয়ে আর কোনও কথা বলা উচিত নয়৷ জনগণের বক্তব্য হল, যাঁরা অন্যায় করেছিল, তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না৷
বহু বছর ধরে চলেছে অযোধ্যা মামলা। সম্প্রতি অযোধ্যা মামলায় রায় দিয়েছে দেশটির মালাউন সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, বিতর্কিত জমিতে তৈরি হবে রাম মন্দির। আর অন্যত্র ৫ একর জমি মুসলিমদের দেওয়া হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ১৫২৮ থেকে ২০১৯ রাম মন্দির-বাবরি বিতর্কের ইতিহাস।
১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় তৈরি হয় বাবরি মসজিদ। হিন্দুদের কিছু সংগঠন দাবি করতে শুরু করে মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে এই মসজিদ। ১৮৫৩ সালে প্রথম এই ইস্যুতে বিরোধ বাঁধে।
১৮৫৯ সালে ব্রিটিশরা একটি প্রাচীর দিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের প্রার্থনার জায়গা আলাদা করে দেয়। এভাবেই ৯০ বছর ধরে প্রার্থনা চলছিল।
১৯৪৯-এ প্রথম এই জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে যায়। সেইসময় হিন্দু সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে রামের মূর্তি স্থাপন করে মসজিদের ভিতরে।
১৯৮৪-তে রাম মন্দির গড়ার দাবি নিয়ে হিন্দুদের একটি কমিটি তৈরি হয়। তিন বছর পর একটি জেলা আদালত নির্দেশ দেয়, যাতে ওই বিতর্কিত এলাকা হিন্দুদের প্রার্থনার জন্য খুলে দেওয়া হয়। মুসলিমরা তৈরি করে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি।
এরপর ১৯৮৯-তে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ওই স্থানে। ১৯৯০-তে রাম মন্দির তৈরির সমর্থনে রথযাত্রা করে এলকে আদবানী।
১৯৯২-তে ভারতের তৎকালীন সরকারের প্রকাশ্য মদদে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয় বর্বর হিন্দু সন্ত্রাসীরা। দেশ জুড়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে ২ হাজার মুসলমান নিহত হয়।
২০১০-এ এলাহবাদ হাই কোর্ট একটি রায় দেয়। তাতে বলা হয় ওই বিতর্কিত জমিটি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। নির্মৌহী আখড়া, রাম লাল্লা ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় দেশটির মালাউন সুপ্রিম কোর্ট।
প্রথমে তিনজন মধ্যস্থতাকারী দেওয়া হয় এই মামলার জন্য। পরে, গত ৬ আগস্ট থেকে প্রত্যেকদিন এই মামলার শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপরির বেঞ্চ। ১৬ অক্টোবর সেই শুনানি শেষ হয়।
এরপর গত ৯ নভেম্বর এই মামলায় রায় দেয় দেশটির মালাউন সুপ্রিম কোর্ট।
জানিনা আরো কতকাল আমরা মিটিং- মিছিলের পথে হাঁটবো!