ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি ভারতের পুশইন করা মোট ২৩৬ পাসপোর্টবিহীন বাংলা ভাষাভাষীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পুশইন করার জন্য আরো বহু মানুষকে জড়ো করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালুরু শহরের বাসিন্দা। তারা জানান, তারা ব্যাঙ্গালুরু শহরে বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের ভাষ্যমতে, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী ভারত সরকার মুসলমানদের বিতাড়নের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সরকারের লোকজন এসে আমাদের বলেছেন, ‘তোমরা বাংলাদেশী মুসলমান। এ দেশে তোমাদের কাজ করতে দেয়া হবে না। তোমরা দেশে চলে যাও।’ এছাড়া এনআরসি আতঙ্কে অনেকেই ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় আছেন। কারণ, কর্নাটকে এনআরসি চালুর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তাদের কোনো ধরনের দলিলপত্র না থাকায় সন্ত্রাসী প্রশাসনিক নির্যাতনের ভয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেশ কয়েক দিন আগে ভারত সরকার ব্যাঙ্গালুরু শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৯ জনকে রেলে কলকাতায় নিয়ে আসে।
গত বেশ কয়েক দিনে প্রায় আড়াইশ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা দৃশ্যমান করে তুলেছে ‘এনআরসি’র প্রভাব।
কথিত রাজ্য সরকার জানিয়েছে এই ‘এনআরসি’ প্রক্রিয়াটা করা হয়েছে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদেরকে চিহ্নিত করতে। তবে খোদ ভারতেই এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উচ্চারিত হচ্ছে। জনগন বলছে, এই ‘এনআরসি’র আড়ালে ভারতের মুসলমানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিলের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী অমিত শাহ বলেছে, এই ‘এনআরসি’র অভিজ্ঞতা পুরো ভারতবর্ষে প্রয়োগ করা হবে এবং সব অবৈধ অভিবাসীকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হবে। একই সাথে সে এও বলেছেন, কোন হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান অভিবাসীকে ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে না। তদুপরি চলতি সংসদ অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল- ২০১৯ (CAB-19) আনা হবে যেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দু, জৈন, খ্রিষ্টান, শিখ ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব দেয়া যায়’। ইতোমধ্যে এই বিল ভারতের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশের পর সে দেশের রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। যা নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে তীব্র বিক্ষোভ হচ্ছে। অনেক জায়গায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার, বিজেপি নেতৃবৃন্দ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে সব বক্তব্য জনসমক্ষে দিচ্ছে তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যেন ‘এনআরসি’ বা এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চালানোর মূল এবং একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়।
ভারতের সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করলে স্পষ্ট হয় ভারতে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। কাশ্মিরে নতুন করে অচলাবস্থার সৃষ্টি, আসামে ‘এনআরসি’ বাস্তবায়ন ও পুরো দেশে এই প্রক্রিয়া চালুর পরিকল্পনা, বাবরি মসজিদ নিয়ে হিন্দু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আদালতের রায় ইত্যাদি সবই অল্প সময়ের ব্যবধানে সামনে আসায় এ ধরনের বিশ্বাস মানুষের মনে খুবই দৃঢ় হয়ে গেছে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত