“এটা একটা আশীর্বাদের মতো ছিল যে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদেরকে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হতো না যে, দিনটা আমরা পার করতে পারবো কি না”, বললো ১৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মুসলিম রাহিমা। মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে আসার পর প্রথম কিছু দিনের কথা স্মরণ করে এ কথা বললো সে।
এই মেয়ে আরো বললো, ‘দুঃস্বপ্ন’কে সে অতীতের বিষয় ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু এক মুদির দোকানে রেডিওতে সে শুনেছে যে, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) পাস হয়েছে এবং এর ফলে কি হতে পারে। এরপর পুরনো দুঃস্বপ্ন আবার তাড়া করছে তাকে।
রাহিমা বললো, “ধীরে ধীরে ভারত আমাদের ঘর হয়ে গেছে”। ছয় বছর আগে দুই ভাইকে নিয়ে ভারতে এসেছিল রাহিমা। এখন তারা থাকে দক্ষিণ দিল্লীর শরণার্থী ক্যাম্পে।
“যাদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না, তাদের যে কারও চেয়ে আমাদের পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ। সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে আমরা যেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলাম, আমাদেরকে আবার সেখানে ফেরত পাঠানো হবে। এটা আমাদের মৃত্যু পরোয়ানার চেয়েও কোন অংশে কম নয়।
সে বললো, “আমি রাজনীতিতে জড়াতে চাই না কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি এখন খুবই কঠিন”।
ভারতে যে প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করছে, তাদের মধ্যে রাহিমা একজন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বাস করছে তারা।
দক্ষিণ দিল্লীর ক্যাম্পে বসবাসরত আরেকজন হলো ২২ বছর বয়সী সালাম।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের তুলা তোলি গ্রাম থেকে রাতে তাকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল কারণ সেনাবাহিনী তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, তার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করেছিল এবং তাকে বলেছিল যে, এরপর তাকে হত্যা করা হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের গ্রামের ৩৫ জন লোকের সাথে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশে যায় আমরা। কক্সবাজারে গিয়ে দিনমজুর হিসেবে চার মাস কাজ করি এবং এরপর কয়েকজনের সাথে ভারতে চলে আসি”।
সালাম বলেন, যখন গ্রাম ছেড়ে আসেন, তখন সেখানকার পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ।
তিনি বলেন, “আমার গায়ে যে কাপড় ছিল, শুধু সেটা নিয়েই গ্রাম থেকে আমি দৌড়ে পালিয়ে আসি। কেউ তাদের ঘর ছেড়ে পালাতে চায় না, আমাদেরকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন ভারতে আমরা আরেকটা ঘর পেয়েছি এবং সেখান থেকে আমাদের চলে যেতে বাধ্য করা হবে”।
সিএএ অনুসারে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সব অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছে, তাদেরকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
এই আইনে রোহিঙ্গাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে, যাদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
সূত্র: পিটিআই