নোটিস পাঠিয়ে বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার৷ ক্ষতিপূরণের পিছনেও কাজ করছে মুসলিম বিদ্বেষের বিভেদের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি।
ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি৷ উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার মুসলিম বিক্ষোভকারীদের বাড়িতে বাড়িতে নোটিস পাঠায়৷ যাতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দেখানোর সময় সরকারি সম্পত্তি তছনছ করার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ এমন ঘটনা যে এই প্রথম ঘটছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের মালাউন পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ও পি সিং৷
চিহ্নিত করা হয়েছে ৪৭৮ জনকে৷ তার মধ্যে ৩৭২ জনের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের নোটিস৷ বলা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিক্ষোভের ছবি দেখে এই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হয়েছে৷ নোটিসে সাড়া না দিলে প্রয়োজনে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে৷সন্ত্রাসী যোগী আদিত্যনাথ স্বয়ং জানিয়ে দিয়েছিল, যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘বদলা’নেওয়া হবে৷ এই কি সেই বদলার নমুনা? প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা৷
বিরোধীদের বক্তব্য, এর আগে উত্তরপ্রদেশে কম বিক্ষোভ হয়নি৷ যোগী সরকারের আমলেই বিক্ষোভে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যথেষ্ট৷ কিন্তু তখন কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷
খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সায়ানার পুলিশ অফিসার ছিল সুবোধ কুমার সিং৷ বজরং দলের সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর চড়াও হয়৷ থানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷ এবং শেষ পর্যন্ত সুবোধ কুমার সিংকেও খুন করা হয়৷ আজ পর্যন্ত সেই ঘটনায় বজরং দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি যোগী সরকার৷ একজনও বিক্ষোভকারীর বাড়িতে পাঠানো হয়নি ক্ষতিপূরণের নোটিস৷
এমনিভাবে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় জাঠ বিক্ষোভ হয়েছিল৷ রাস্তা কাটা থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরসহ কিছুই বাদ যায়নি৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এনআরসি, সিএএ নিয়ে গোটা দেশে যে পরিমাণ ভাঙচুর হয়েছে, শুধু হরিয়ানাতেই জাঠ আন্দোলনের সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল৷ কিন্তু বিজেপি সরকার কোনও ক্ষতিপূরণ চায়নি৷
এই হরিয়ানাতেই ২০১৭ সালে রাম রহিমবাবার শিষ্যরা পাঁচকুল্লায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ রাস্তার দুই ধার ভরে গিয়েছিল জ্বলে যাওয়া পুলিশের গাড়িতে৷ গুলি চলেছিল৷ ঘটনার পর রাম রহিম গ্রেফতার হলেও তাঁর শিষ্যদের কাছে থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়নি৷
বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন ঘটনার তালিকা আরও লম্বা হতে পারে৷ প্রশ্ন উঠছে, সেই ঘটনাগুলিতে প্রশাসনের ভূমিকা আর এনআরসি, সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে তাদের ভূমিকা এক রকম নয় কেন? বিরোধীদের বক্তব্য, এর পিছনে আসলে মুসলিম বিদ্বেষী ধর্মীয় বিভেদের রাজনীতি কাজ করছে৷
শুধু তাই নয়, প্রশ্ন উঠছে, যে সরকার ক্ষতিপূরণ নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তারাই উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভে নিহত ১৯ জনের বিষয়ে একটি কথাও কেন বলছে না? একাধিক ভিডিওচিত্রে পুলিশকে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে, অথচ সে ক্ষেত্রেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷ প্রশ্ন রয়েছে আরও৷ বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বিনা প্ররোচনায় পুলিশ সাধারণ মানুষের গাড়ি, ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছে৷ তাহলে সেই সমস্ত পুলিশকে চিহ্নিত করে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণের নোটিস দেওয়া হচ্ছে না কেন?
বিরোধীদের প্রশ্ন অনেক৷ কিন্তু যোগী সরকার নিরুত্তাপ৷ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠিনতম ব্যবস্থা নেওয়াই এখন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য৷ কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামছে না৷
সূত্র: (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)