স্কুলের পাশে সাবেক এক ইউপি সদস্য গড়ে তুলেছেন গরুর গোয়ালঘর! স্কুলে যাওয়ার কাঁচারাস্তার ওপর বেঁধে রাখা হয় গরু।
ইউপি সদস্যের অন্য দুই ভাই ভবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে করেছেন রান্নাঘর। রান্না করার সময় চুলার ধোঁয়া শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। তাদেরও রয়েছে বেশ কয়েকটি গরু। স্কুলজুড়ে গোবর ও গো-মূত্রের দুর্গন্ধ।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ১৩০ নম্বর ছাইকোলা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ এটি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ গরুর গোয়াল ও রান্নাঘর সরিয়ে নিতে ওই ইউপি সদস্যকে বললেও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে উল্টো প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং মারধর করতেও আসেন তারা বলে অভিযোগে জানা যায়।
এর আগে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বারবার বলার পরও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এ কারণে দিনে দিনে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে যাচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সামনে ও পেছনের অংশজুড়ে ছাইকোলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল আলীম, তার দুই ভাই আতাউর ও আলীমের বসতঘর। স্কুলে প্রবেশ মুখের কাঁচারাস্তার পাশে আবদুল আলীম তৈরি করেছেন গোয়ালঘর। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাঁধা থাকে গরু।
আর বিদ্যালয় ভবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে তার দুই ভাই আতাউর ও তালেব হোসেন তৈরি করেছেন রান্নাঘর। ভবনের পেছনে বেঁধে রাখা হয় তাদেরও বেশ কয়েকটি গরু।
ক্লাস চলাকালীন হাওয়া প্রবেশের জন্য জানালা খুললেই গোবর ও গো-মূত্রের উৎকট গন্ধে ভরে ওঠে। আর চুলার ধোঁয়ায় ভরে ওঠে শ্রেণিকক্ষ। যে কারণে স্কুল চলাকালীন শ্রেণিকক্ষের জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং আলোর স্বল্পতার কারণে পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মাঝেমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর রাস্তা বন্ধ করে তাদের দেখাদেখি স্কুলের চারপাশে অন্যরাও রোদে শুকাতে দিয়েছেন গোবরের শলা।
স্কুলটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন, হুমায়রা খাতুন ও মান্না হোসেন যুগান্তরকে বলে, গোবর, গো-মূত্র এবং রান্নাঘরের চুলার ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। যে কারণে মাঝেমধ্যে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয় বলে জানায় তারা।
শহীদুল ইসলাম ও সবুজ্জ্বল হোসেন নামে দুই অভিভাবক যুগান্তরকে বলেন, স্কুলের পাশে গরু বেঁধে রাখা এবং রান্নাঘর সরানোর জন্য এর আগে বহুবার ওই মেম্বারকে বলা হয়েছে কিন্তু তারা কোনো কিছুই কানে নিচ্ছেন না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুদা পারভীন যুগান্তরকে বলেন, এমনিতেই স্কুলটি শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার পর আবদুল আলীম ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা নানাভাবে অত্যাচার করে। এ ছাড়া স্কুলের বেশ কিছু জায়গা তাদের দখলে রয়েছে। সমস্যার কথা বলতে গেলে উল্টো তারা নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তিনি।
অভিযোগে ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল আলীমের কাছে জানতে গেলে উল্টো তিনি এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে বলেন, আপনাকে কে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে? আমরা কী গরু-ছাগল লালন-পালন করব না? আর আশপাশের সবাই গরুর গোবর শুকাতে দেয়, শুধু আমার বেলায় স্কুলের লোকজন এমন করে কেন?
আমরা কী তা হলে এখান থেকে বাড়িঘর তুলে নিয়ে যাব?
এদিকে ওই ইউপি সদস্য রাস্তার পাশের একটি বড়ইগাছের কয়েকটি ডালকে রক্ষা করতে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থা!
পাশেই তাদেরও গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। শুধু ইউপি সদস্যেই নয়, আশপাশের অনেকেই স্কুলের রাস্তা বন্ধ করে শুকাতে দেন গোবরের শলাকা। চারদিকে শুধু গরুর গোবর ও গো-মূত্রের দুর্গন্ধ। জানালা খুললেই শ্রেণিকক্ষ চুলার আগুনের ধোঁয়ায় ভরে উঠছে। শিক্ষার্থীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের এমন পরিবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।