হঠাৎ করেই আবার বেড়েছে চালের মূল্য। গত সপ্তাহে যে মোটা চালের কেজি ৩৫ টাকা ছিল, সেই চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে, এই সময়ে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে দাবি করছেন আড়তদাররা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের সরবরাহ কম থাকায় মূল্য বেশি। এদিকে, ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা যখন-তখন চালের মূল্য বাড়াচ্ছেন। আর এই মূল্যবৃদ্ধিকে কৃষকের জন্য ভালো সংবাদ হিসেবেই দেখছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তার মতে, মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। রোববার ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন চালের বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় গত দুই দিনে চালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা। তবে, মোটা চালের তুলনায় সরু চালের মূল্য বেড়েছে বেশি। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। গত সপ্তাহে এই চালের মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা।
বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আড়তে কোনো চালের মূল্য বাড়েনি। এই সময় চালের মূল্য বাড়ারও কোনো কারণ নেই। বাজারে নতুন চাল উঠছে। কাজেই খুচরা বাজারে যদি চালের মূল্য বেড়ে যায়, তা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘চালের মোকাম নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, দিনাজপুরে তো চালের মূল্য কম। এখানে সরবরাহ বা জোগানেও কোনো সমস্যা নেই। এরপরও যদি রাজধানীর খুচরা বাজারে মূল্য বেড়ে যায়, তাহলে এর দায় আমরা নিতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে মোটা বা সরু কোনো ধরনের চালের মূল্য বাড়ার কারণ নেই।’
হঠাৎ চালের মূল্য বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ধান-চালের মূল্য বাড়লে কৃষক লাভবান হন। এতে তারা উৎসাহিত হন। উৎপাদন খরচ না পেলে, মুনাফা না পেলে কৃষক চলবেন কী দিয়ে? এটা বুঝতে হবে।’
চালের মূল্য বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাজধানীর মাতুয়াইলের নির্মাণ শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনে এনে দিনে খাই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের মূল্য বাড়ছে। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বা মজুরি তো বাড়ে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়টি দেখার কাজে সরকারের লোকজনের সময় নেই। তাই ব্যবসায়ীরাও বেশি মুনাফার জন্য সুযোগ গ্রহণ করেন।’
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান বলেন, ‘সারা বছরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং চলে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে। কাজেই বাজারে সরকারের নজরদারি নেই, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’ কোনো কারণ ছাড়া অনৈতিকভাবে কেউ মুনাফা করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সূত্রঃ যায়যায়দিন